শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি-বাড়ি দখলের হামলায় দু’জন বাউন্সার গুলিতে মারা যান। বাড়ির বাসিন্দারা আত্মরক্ষার জন্য গুলি ছোড়েন বলে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি সোমবার আদালতে নিজের সওয়ালে বলেন, সে-দিন মোটেই আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানো হয়নি।
ওই বাড়িতে থাকা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবাল এবং তাঁর দুই সঙ্গীর গুলিতেই দু’জনের মৃত্যু হয় বলে গোয়েন্দাদের অভিযোগ। ১১ নভেম্বর ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি-বাড়িতে দখলদারির হামলা, গুলি, মৃত্যুর পরে অন্যদের সঙ্গে মমতা এবং তাঁর ওই দুই সঙ্গীকেও গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন মমতা এবং তাঁর দুই সঙ্গীর তরফে জামিনের আবেদন জানানো হলে সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস তার বিরোধিতা করেন। তিনি জানান, গুলি চালানোর ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে। সেই ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখে বোঝা গিয়েছে, প্রথমে ওই বাড়ির ভিতর থেকে শূন্যে গুলি চালানো হয়েছিল। তাতে ভয় পেয়ে বাইরে থেকে আসা কয়েক জন যুবক প্রাণ বাঁচাতে ওই বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন। তার পরে তাঁদের টেনে বার করে খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয়। তাই এটাকে কখনওই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো বলা যায় না। গুলিতে দু’জন প্রাণ হারান, জখম হন তিন জন।
মমতাদের আইনজীবীরা অবশ্য ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠের আদালতে জানান, বহিরাগতদের হামলা থেকে বাঁচতেই ওই দিন গুলি চালানো হয়। তাই এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হতে পারে না। তাঁকে উৎখাত করা হতে পারে এবং তাঁর উপরে পরিকল্পিত হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ওই প্রধান শিক্ষিকা ২০১০ সাল থেকে নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে লিখিত আবেদন জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ন্যূনতম নিরাপত্তাও দিতে পারেনি। শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতেই আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তেরা।
বিচারক জামিনের আর্জি খারিজ করে দেন। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন অভিযুক্তকেই জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, সম্পত্তির কারবারি পরাগ মজমুদারকেও এ দিন অন্য একটি মামলায় আদালতে তোলা হয়। ২০১৩ সালের অগস্টে শেক্সপিয়র সরণি থানায় পরাগের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন মমতা। এ দিন সেই মামলায় পরাগকে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে ৬০০ টাকার বন্ডে জামিন দেন। তবে শর্ট স্ট্রিটের ওই জমি-বাড়ি দখলের মামলায় অন্যতম চক্রী হিসেবে অভিযুক্ত পরাগকে আপাতত জেল-হাজতেই থাকতে হবে। |