সপ্তাহখানেক আগে কেষ্টপুরে ভিআইপি রোডে বাস থেকে নামতে গিয়ে চাদর জড়িয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ উঠেছিল, রেষারেষি করতে গিয়ে বাসটি ঠিকমতো স্টপেজে ঠিক মতো না দাঁড়ানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। ফের প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটল সোমবার। ঘটনাস্থল এ বারও ভিআইপি রোডই। লেকটাউনে বাস থেকে নামতে গিয়ে শাড়ি জড়িয়ে পড়ে গেলেন এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। এ বারও অভিযোগের তির বাসচালকের দিকেই। অভিযোগ, বাসটি স্টপেজে ঠিক মতো না দাঁড়িয়েই চলতে শুরু করে। এ দিন অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন মহিলা। পরপর একই রকমের দু’টি ঘটনায় প্রশ্নের মুখে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা। অভিযোগ, ভিআইপি রোডে বাসগুলি এতটাই বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে যে রীতিমতো প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়।
এ দিনের ঘটনাটি ঘটে বেলা ১১টা নাগাদ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিতা দাস (৫০) নামে ওই মহিলার পায়ের উপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে লেকটাউনের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অনিতাদেবী সল্টলেকে জলসম্পদ ভবনে চাকরি করেন। এ দিন তিনি বাড়ি থেকে নাগেরবাজারে এসে প্রতিদিনের মতোই একটি ২২১ নম্বর বাস ধরে লেকটাউনে আসেন। ধর্মঘটের কারণে এমনিতেই বাসে ভিড় ছিল বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২২১ রুটের বাসটি লেকটাউন মোড়ে দু’জন যাত্রীকে নামিয়েই সিগন্যাল পেয়ে যাওয়ায় চলতে শুরু করে। এক যাত্রী বলেন, “হঠাৎ বাসটা তাড়াহুড়ো করে চলতে শুরু করল। যাঁরা নামছিলেন, তাঁরা সবাই তখনও নামতে পারেননি। ওই মহিলা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে শাড়ি জড়িয়ে পড়ে যান। আমরা হইহই করে উঠলেও বাসচালকের তা কানে যায়নি। বাসও তখন বেশ ভালই গতিতে চলতে শুরু করেছে।” এর পরেই বাসের পিছনের চাকা অনিতাদেবীর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয়রা হইচই করে উঠলেও বাস থামেনি। বরং বাস নিয়ে দ্রুত গতিতে পালাতে চেষ্টা করেন চালক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাসটিকে ধরে ফেলেন লেকটাউন ট্রাফিক গার্ডের ওসি। চালক অবশ্য পলাতক। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, ভিআইপি রোড যেন রেসিং ট্র্যাক। বেশ কিছু রুটের বাস রোজই রীতিমতো এই রাস্তায় প্রতিযোগিতা চালায়। যাত্রী তুলতে নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়ালেও যাত্রী নামানোর সময়ে তাদের কোনও খেয়াল থাকে না। রাস্তার মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী নামিয়ে হুড়মুড় করে চলে যায়। ফলে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এক প্রত্যক্ষদর্শী অজিত হালদার বলেন, “আজকের দুর্ঘটনাও বাসচালকের দোষে। বাসটা যদি হুড়মুড় করে চলতে শুরু না করত, তা হলে দুর্ঘটনা ঘটত না।”
ভিআইপি রোডে কেষ্টপুর থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত উড়ালপুল তৈরি হচ্ছে। সেই কাজের জন্য বাগুইআটি বা কেষ্টপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টপগুলি এগিয়ে-পিছিয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, বাসকে ঠিক জায়গায় দাঁড় করানোর ব্যপারে ট্রাফিক পুলিশকে আরও সচেতন হতে হবে। বাসগুলো বেশির ভাগ সময়েই ঠিক জায়গায় দাঁড়ায় না। ফলে যাত্রীদের দৌড়ে বাস ধরতে হয়। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি (ট্রাফিক) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজকের ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে ভিআইপি রোডে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। বাসচালক ও অটো চালকদের সচেতন করতে আমরা শীঘ্রই সচেতনতা কর্মসূচি নেব।” |