বাস নামানোর ব্যর্থ আশ্বাসে নাকাল শহর
প্রতিশ্রুতিটা রয়ে গেল কাগজে-কলমেই। বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখতে পেলেন না মহানগরবাসী। সোমবার বাস ধর্মঘটের দিন শুধু রাস্তায় বেরিয়ে নাজেহাল হওয়াই নয়, ঘটল দুর্ঘটনা-মারামারিও।
বাস ধর্মঘটে জনজীবন সচল রাখতে সরকারি পরিবহণে আস্থা রাখতে বলেছিল প্রশাসন। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে হাতেগোনা সরকারি বাস নজরে এসেছে। গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি ভাড়া দিয়ে অটো-ট্যাক্সি-শাট্ল গাড়িতে চাপতে হয়েছে লোকজনকে। দিনভর বাস ডিপোয় ঘুরেও লোকজনের সমস্যা কমাতে পারেননি খোদ পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও।
এ দিন সকাল থেকেই পথে নেমেছিলেন মন্ত্রী। ডানলপ, হাওড়া, শিয়ালদহ, ধর্মতলায় গিয়ে খতিয়ে দেখেন, বাস চলছে কি না। চলন্ত বাস থামিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে হাত মেলাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কথা বলেছেন যাত্রীদের সঙ্গেও। কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ মানুষকে কতটা স্বস্তি দিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বস্তুত, মন্ত্রীর সামনেই পরিবহণ সমস্যা ফুটে উঠেছে বারবার।
রাস্তায় কাতারে কাতারে যাত্রী, বাসের দেখা নেই। একটি-দু’টি বাস পেলেই
তাতে হুড়োহুড়ি করে ওঠার চেষ্টা। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
শহরে কাজে আসা বেশির ভাগ মানুষই আসেন শহরতলি বা লাগোয়া জেলাগুলি থেকে। এ দিন তাঁদের কর্মক্ষেত্রে পৌঁছনোর বড় ভরসা ছিল ট্রেন-ই। শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রধান ভরসা ছিল অটো। ফলে সকাল থেকেই শিয়ালদহ ও হাওড়া শাখার লোকাল ট্রেনে গাদাগাদি ভিড় ছিল। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে ঝুলতে গন্তব্যে পৌঁছন অনেকে। ভিড়ের জন্য শহরের কাছাকাছি স্টেশন থেকে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনে উঠতে পারেননি। দুপুর সওয়া বারোটা নাগাদ দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে বছর আটেকের ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রঞ্জিত দাস। বললেন, “ভিড়ের জন্য টানা তিনটে ট্রেন ছেড়ে দিতে হল।”
জেলা থেকে ট্রেনে করে হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছেও নাকাল হয়েছেন অনেকে। কারণ, সেখান থেকে বাকি শহরে পৌঁছনোর জন্য তেমন যানবাহন ছিল না। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হাওড়া বাসস্ট্যান্ডেই সরকারি বাসের লাইনে মারামারি লাগে দুই যুবকের। শেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। হাওড়া স্টেশন থেকে অনেকেই হেঁটে বিবাদী বাগ, ধর্মতলা চত্বরে এসেছেন।
হাওড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশাপাশি, পরিবহণ সমস্যা হয়েছে ওই জেলার অন্য জায়গাতেও। সলপ মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বাস না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করেন যাত্রীরা। আধ ঘণ্টা পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বালি থেকে ধর্মতলা-খিদিরপুরের বাস চলেনি বললেই চলে। ঠাসাঠাসি ভিড় হয়েছে হাওড়া ও শিয়ালদহমুখী ট্রেনে। বাস ছিল না ২ নম্বর জাতীয় সড়কেও। ফলে ট্যাক্সি কিংবা শাট্ল গাড়ির উপরেই ভরসা করতে হয়েছে মানুষকে।
হাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে যেতে ৭০০ টাকা ভাড়া হেঁকেছে ট্যাক্সি।
বাঁশদ্রোণী, গড়িয়া থেকে অবশ্য কয়েকটি রুটের বাস-মিনিবাসের দেখা পেয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। সেই সঙ্গে ওই রুটে চলেছে বেশ কয়েকটি সরকারি বাসও। ২২৮, ৮০এ এবং ২০৫ রুটের বাস চললেও তা ছিল হাতেগোনা। বাস চলেছে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নির্বাচনী কেন্দ্র কামারহাটি থেকেও। ২৩০, ২৩৪, ৩৪বি রুটের কয়েকটি বাস চলার ফলে কিছুটা হলেও সচল ছিল বিটি রোড। বরাহনগরের এক বাসিন্দা বলেন, “কামারহাটি, বরাহনগর থেকে গুটি কয়েক বাস না চললে দুর্ভোগ আরও বাড়ত।”
বাস ধর্মঘটে এ দিন তুলনামূলক বেশি ভিড় টেনেছে মেট্রো। ভাড়া বাড়ার পর থেকে মেট্রোর ভিড় কিছুটা কমেছিল। কিন্তু বনগাঁ মেন বা ডানকুনি শাখার বহু যাত্রীই দমদমে নেমে মেট্রো ধরেছেন এ দিন। অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে অল্পবিস্তর ব্যাঘাতও ঘটেছে মেট্রোর সময়সূচিতে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.