ধর্মঘটের মওকায় ভাড়া বাড়াল ট্রেকার-অটো
সাধারণত ১০ টাকাতেই দিব্যি রামপুরহাট থেকে নলহাটি পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু রাগে গজগজ করতে করতে পকেট থেকে তিনটে দশ টাকার নোট বের করতে হল নলহাটির শুভঙ্কর দাসকে!
বস্তুত, সোমবার বাস-মিনিবাস মালিকদের ধর্মঘটের জেরে বীরভূমের প্রায় সর্বত্র এ ভাবেই ভুগলেন সাধারণ মানুষ। আর মওকা বুঝে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে নিজেদের পকেট গরম করল মোটরচালিত ভ্যান থেকে অটো, ট্রেকার এবং ট্যাক্সি চালকদের একটা বড় অংশ।
এ দিন সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় হালকা মেঘলা আকাশ, মাঝারি কুয়াশা সঙ্গে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। সে সব উপেক্ষা করে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সকলকেই নানা ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করে গন্তব্যের দিকে পা বাড়াতে হয়েছে। কারণ, সকাল থেকেই রাস্তায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস নজরে পড়েনি। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সরকারি বাসও অনেক কম। এটা বিচ্ছিন্ন নয়, সিউড়ি, নলহাটি, বোলপুর, ময়ূরেশ্বর, লাভপুর, দুবরাজপুর, রামপুরহাট এই চিত্র জেলার প্রায় সর্বত্রই ছিল। তার উপরে ছিল মোটরচালিত ভ্যান, অটো, ট্রেকার ও ট্যাক্সি চালকদের জুলুম। ধর্মঘটের অছিলায় অনেকেই নিজেদের পকেট গরম করতে কেউ তিনগুন কেউ বা চারগুন বেশি ভাড়া চেয়েছেন। প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, জেলায় উপযুক্ত সংখ্যায় সরকারি বাস চলেছে।

বোলপুরে ভরসা ট্রাক।
ময়ূরেশ্বরের গুনুটিয়া ঘাটে এক ট্রেকার চালকের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া জুড়েছেন মাঝ বয়সী শিবানী ঘোষ। তিনি যাবেন লাভপুর। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাননি। অগত্যা ট্রেকারে যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই মেজাজ চড়ে গেল শিবানীদেবীর। বললেন, “ট্রেকারের লোক ২৫ টাকা চায়! আরে অন্য দিন তো ১০ টাকা নেয়। আজ, তাহলে কেন এত বেশি দেব?” শেষে ১৮ টাকায় রফা হল দু’জনের। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে লোকপাড়া-কলেশ্বরে যাত্রীদেরও। কেউ মোটরচালিত ভ্যানে কেউ ট্রেকারে ঝুলতে ঝুলতে দ্বিগুনেরও বেশি টাকা দিয়ে পৌঁছেছেন গন্তব্যে। সকাল থেকে এক চিত্র ছিল রামপুরহাট শহরের লোটাস প্রেস মোড়েও। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বেসরকারি বাস মেলেনি। যে সামান্য ক’টা সরকারি বাস স্ট্যান্ডে এসেছে, ভিড়ের চোটে অনেকেই তাতে উঠতে পারেননি। শেষে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে থেকে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার পাঁচগ্রামের দেবপ্রসাদ রায়, নলহাটির শুভঙ্কর দাস, রামপুরহাটের দেখুড়িয়া গ্রামের শিবানী লেটরা ভ্যান, ট্রেকারের মতো যানে অনেক বেশি টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পা বাড়ালেন। বোলপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল কিংবা বোলপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্যাক্সি বা অটো-ট্রেকার চালকেরা এ দিন মওকা বুঝে যাত্রীদের কাছে থেকে বেশি ভাড়া নিয়েছেন।
বটপাতা জোগাড় করে বাঁশি বাজান খয়রাশোলের রসাগ্রামের গ্যান্ডা ডোম। দুপুরে রাজনগর তাঁতিপাড়া নবকিশোর বিদ্যানিকেতনে ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানোর ডাক পেয়েছিলেন। ধর্মঘটের জন্য ঘণ্টা চারেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বাবুইজোড়-পাঁচড়া রাস্তায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাননি। শেষে একই রাস্তা দিয়ে যাওয়া এক সুহৃদয় ব্যক্তি নিজের মোটর বাইকে করে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আসেন। একই ভাবে সিউড়ি পৌঁছন মহম্মদবাজারের বধূ সরস্বতী লেটও। তাঁর সিউড়িতে ডাক্তার দেখানোর দিন ছিল। দু’জনেই বললেন, “এ বার কী করে বাড়ি ফিরব, জানি না!” তাঁদের মতো অবশ্য ভাগ্য ভাল ছিল না দুবরাজপুরের রেণুকা বাউড়ির। অসুস্থ স্বামী আসানসোলে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে দেখতে যাবেন বলে ভোরে বেরিয়ে ছিলেন। কিন্তু সিউড়ি-আসানসোল (ভায়া দুবরাজপুর) রুটে একটিও বাসের দেখা মেলেনি। এমনিতেই ওই রুটে সরকারি বাসই চলে না। ফলে ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হলেন রেণুকা।


(বাঁ দিকে) ধর্মঘটের জেরে বাস বন্ধ। লাইন দিয়ে ট্রেকারে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রামপুরহাটে। (ডান দিকে) সিউড়িতে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বেসরকারি বাস।
মানুষকে এমন দুর্ভোগে ফেলার জন্য জেলার বাসমালিক সংগঠনগুলি রাজ্য সরকারের একগুঁয়ে মনোভাবকেই দায়ী করছে। তাদের দাবি, জেলার প্রায় তিনশো বাস রুটে ৬০০-৭০০ বাস চলে। ভাড়া না বাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়ে বেশ কয়েকটি রুটের বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটির ক্ষেত্রে বাসের সংখ্যা কমে এসেছে অনেকটাই। বীরভূম জেলা বেসরকারি বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “২০০৫ সালের পরে আর বাস ভাড়া বাড়েনি। অথচ এই ক’বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেড়েছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দামও বেড়েই চলেছে। এ সবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়া না বাড়লে মালিকেরা কী ভাবে বাস চালাবেন!” অন্য একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিমও বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে যে হারে জ্বালানি, যন্ত্রপাতি, বিমা ও ট্যাক্স বাবদ বাস চালানোর খরচ বেড়েছে, সেই অনুপাতে ভাড়া বাড়েনি।”
ধর্মঘটকে সমর্থন না করেই সিউড়ির একটি বেসরকারি ফার্মের কর্মী সুবীর দত্ত, দুবরাজপুরের ব্যবসায়ী রথীন দাঁ, বোলপুরে একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষিকা নন্দিতা অধিকারী, সিউড়ির স্কুলের শিক্ষক কৌশিক মুখোপাধ্যায়-রা অবশ্য বলছেন, “ক্ষতি দিতে দিতে যদি বাসগুলিই বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে সাধারণ মানুষকেই। সেই দিকটা সরকারের বিবেচনা করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যে ভাড়া দিতে পারবেন, সেই অনুযায়ী তা বাড়ানো উচিত।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.