বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে ফেরার পরে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামি লিগ একাই ২৩৬টি আসন পেয়েছে। শরিক ওয়ার্কার্স পাটি ও জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) ৬টি করে ১২টি আসনে জিতেছে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ৩১টি আসন। এই নির্বাচন শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরই নিজের সরকারি বাড়ি ‘গণভবন’-এর খোলা চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ১৪ দলের জোটের নেত্রী হাসিনা বলেন, “যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়, যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, তারাই নির্বাচনে যায়নি।” হাসিনা জানান, নতুন সরকার দেশ থেকে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উৎখাতের লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাবে। বিচারের রায়ও কার্যকর করবে। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী জামাতকে ঘাড় থেকে নামান। ওরা সুস্থ ভাবে ভাবতে দেয় না। ওদের ছেড়ে, হিংসা ছেড়ে আলোচনায় আসুন, আলোচনা হবে।”
বিকেলে এই সাংবাদিক সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পরেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আবার নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে বিরোধী নেত্রী বলেন ভোটের লাইনে না-দাঁড়িয়ে মানুষ এই সরকার ও তার ‘সাজানো’ নির্বাচনে অনাস্থা জানিয়েছেন। এ দিন সকালেই লন্ডন থেকে ইউটিউবে পোস্ট করা দ্বিতীয় ভিডিও-বার্তায় খালেদা-পুত্র তারেক রহমান ঘোষণা করেন, এই ‘অবৈধ’ সরকারের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় যাবেন না। এই সরকারকে উচ্ছেদের জন্য তাঁদের কর্মীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনও চালিয়ে যাবে। তারেকের ভিডিও-বার্তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রতিক্রিয়া “এর আগে লাদেন এমন ভিডিও-বার্তা পাঠাত। এখনও কেউ কেউ তা করে চলেছে। এদের সঙ্গে মানুষের যোগ নেই।” |
জয়ের হাসি। সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। ছবি: এএফপি। |
দেশে মাস দেড়েক ধরে অশান্তির জন্য বিরোধীদের দায়ী করে হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রে এদের বিশ্বাস নেই। সংবিধানের শাসন অব্যাহত রাখার দায়ও নেই। এদের আমলে বাংলাদেশ জঙ্গি-অধ্যুষিত অনুন্নত দেশের তকমা পেয়েছিল। ক্ষমতায় ফেরার জন্য এই শক্তি আগুনে বোমায় মানুষ খুনে নেমেছে। সব্জি এমনকী গরুবোঝাই ট্রাকও জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এদের হুমকি সত্ত্বেও বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের ধন্যবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাঁরাই ভোটে অংশ নিয়েছেন।” হাসিনার কথায়, বিরোধী নেত্রী বলেছেন, একটি ভোটারও যাতে কেন্দ্রে না যায়। তা-ও জনগণ গিয়েছেন। যতটুকু ভোট পেয়েছেন, তাতেই তিনি সন্তুষ্ট। হাসিনা বলেন, “ভোটকেন্দ্র হবে বলে ১০০ স্কুল পুড়িয়ে দিল। এত হরতাল-অবরোধেও আমরা জানুয়ারির পয়লা তারিখ দেশ জুড়ে ৩১ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে দিয়েছি। আর ওরা স্কুলে স্কুলে আগুন দিচ্ছে!”
আন্তর্জাতিক শক্তি কি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে? জবাবে জ্বলে উঠে পাল্টা প্রশ্ন করেন হাসিনা কেন করবে তারা? তাঁর কথায়, প্রথমত এই ভোট দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়। তা ছাড়া, যথেষ্ট ভাল নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে। এর চেয়ে অনেক খারাপ ভোট আন্তর্জাতিক মহল গ্রহণ করেছে। আওয়ামি লিগ নেত্রীর দাবি, কোনও কোনও বিদেশি শক্তি বিরোধীদের শক্তি জুগিয়েছে। হাসিনা বলেন, “তাদের কথায় নেচে কী হল ওনার (খালেদার)? এ কূল, ও কূল দু’কূলই তো গেল। সংসদের বাইরে বসে থাকুন এখন।”
হাসিনার অভিযোগ, ভোট বানচাল করে, দেশে অচলাবস্থা তৈরি করে সরকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্তব্ধ করে দেওয়াই ছিল বিরোধীদের কৌশল। মানুষ তা বানচাল করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি নিজে বিরোধী নেত্রীকে আলোচনায় ডেকেছি। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার আগে পাঁচটা বছর ওরা সংসদে আসেনি। কোনও বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেয়নি। আপনারা সবই দেখেছেন। এখন বলছে সরকার আলোচনা করেনি।”
হুসেইন মহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি আজ জানিয়েছে, নতুন সংসদে তারা বিরোধী আসনে বসবে। বিরোধী নেত্রী হবেন দলের প্রবীণ নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ। নির্বাচনে যাওয়া, না-যাওয়া নিয়ে এরশাদের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি তো ভালই আছেন। গল্ফ খেলছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকলেই ভাল আছেন।” জাতীয় পার্টিকে সরকারে নেওয়া হবে কিনা, প্রশ্নের জবাবে তিনি হেসে বলেন, “আমি সকলকে নিয়ে ঐকমত্যের সরকার গড়তে চাই। আবার বিরোধী দলও তো লাগবে!”
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসীরাই ভোটে যায়নি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও তো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। হাসিনা তাঁদের কী বলবেন? প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, “কমিউনিস্টদের মধ্যে পাকা মাথা, ভাল যাঁরা, তাঁদের আমি নিয়ে নিয়েছি। বাকিরা পরিস্থিতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে করতেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে। আর সময়ও চলে যাচ্ছে!”
|