চিকিৎসায় ইচ্ছে করে দেরি করছেন চিকিৎসকেরা, রোগীদের ‘ব্যবসার উপায়’ মনে করছেন তাঁরা এমন সব অভিযোগের তির মাঝেমধ্যেই ওঠে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। কখনও সেই অভিযোগের পিছনে ভিত্তি থাকে, কখনও বা তা হয় অমূলক। রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে এই অবিশ্বাস তৈরি হওয়ার পিছনে দায়ী আসলে কী? তা নিয়েই এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। সেখানে এই অবিশ্বাস থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক-রোগী উভয় পক্ষই।
নিউরোলজিস্ট সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের মতে, চিকিৎসকদের নিজেদের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের উচিত রোগীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা এবং রোগের ধরন থেকে চিকিৎসা পদ্ধতি সবটাই বিস্তারিত ভাবে রোগীকে জানানো। একমাত্র এর মাধ্যমেই উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব।”
রোগী-স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি অবশ্য মনে করছে, চিকিৎসকেরা যে ভাবে আর্থিক লাভের দিকেই সব সময়ে তাকিয়ে থাকেন, তাতে তাঁদের পক্ষে নিজেদের আচরণ রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব নয়। এমনই এক সংগঠনের চেয়ারম্যান মলয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, দেশের যে কোনও প্রান্তে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব। পাশ করে বেরোনোর পরে তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওই টাকা উসুল করতে চাইবেন চিকিৎসকেরা। আর এমন করতে গিয়েই রোগীরা এক প্রকার ব্যবসার সামগ্রী হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।”
তবে এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কাউন্সিলেরও অনেক বেশি সচেতন হওয়া জরুরি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। একমাত্র রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কড়া নজরদারি থাকলে তবেই চিকিৎসকদের উপরে রোগীর আস্থা আগের মতো ফিরে আসতে পারবে বলে মনে করছেন রোগী-স্বার্থ নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের কর্তারা। মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তারা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় এখন নজরদারি অনেক বেড়েছে। কিন্তু চেম্বারের ভিতরে এক জন ডাক্তার তাঁর রোগীর সঙ্গে কী ভাবে কথা বলছেন বা অপ্রয়োজনে তাঁকে অস্ত্রোপচার বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলছেন কি না, তা কাউন্সিলের পক্ষে দেখা সব সময়ে সম্ভব নয়।
অবশ্য রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবনতির জন্য শুধুমাত্র চিকিৎসকদের উপরে দায় চাপাতে চান না চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু সেন। তাঁর মতে, এর জন্য অনেকাংশে রোগীরাও দায়ী। তিনি বলেন, “আজকাল ‘উইন্ডো শপিং’-এর মতো রোগীরা ‘ডাক্তার শপিং’ করে থাকেন। এই ভাবে এক জন চিকিৎসকের পক্ষে কোনও রোগীর সুচিকিৎসা করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেমন উচিত রোগীদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করা এবং রোগ বিষয়ে তাঁদের ওয়াকিবহাল করা, তেমন রোগীদেরও উচিত চিকিৎসকের উপরে ভরসা রাখা।” |