বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যাচ্ছেন এ রাজ্যের চিকিৎসকেরা, এমন নজির অনেক আছে। কিন্তু এ বার প্রশিক্ষণ নিতে অন্য দেশের চিকিৎসকেরা আসবেন এ রাজ্যে। কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগকে রেডিয়েশন চিকিৎসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। চলতি সপ্তাহেই এই খবর এসে পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনে। আর তার পরেই এ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তোড়জোড়।
কিন্তু এত হাসপাতাল থাকতে আর জি কর কেন? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়ার জন্য প্রচলিত একটি পদ্ধতির নাম ‘ব্র্যাকিথেরাপি’। এই পদ্ধতিতে রেডিয়েশন-এর উৎস (সোর্স) হিসেবে ইরিডিয়াম এবং কোবাল্ট ব্যবহার করা হয়। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ইরিডিয়ামের ব্যবহারই বেশি। কিন্তু একটি সোর্সের মেয়াদ বড়জোর ৬-৮ মাস। অন্য দিকে, কোবাল্ট সোর্সের মেয়াদ প্রায় ৬ বছর। তাই বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসকেরা কোবাল্ট সোর্স ব্যবহারের ব্যাপারেই ইদানীং সুপারিশ করছেন। কিন্তু যে হেতু প্রযুক্তিটি নতুন, তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই এখনও ওয়াকিবহাল নন। তাই প্রশিক্ষণের পর্বটি খুবই জরুরি।
কোবাল্ট সোর্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলকে পথ দেখিয়েছে আর জি কর। যেখানে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কোবাল্ট প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি, সেখানে তিন বছর আগে থেকেই আর জি করে এই প্রযুক্তিটি চালু রয়েছে। কী ভাবে আর জি কর হাসপাতাল এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে, হাতে-কলমে সেটাই দেখাবেন সেখানকার ডাক্তাররা। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, এ রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোর
মান যে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে, এখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব
তারই প্রমাণ। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এই স্বীকৃতির বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাচ্ছেন তাঁরা।
ক্যানসার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রেডিয়েশনের সোর্স আনানোর প্রক্রিয়াটা যথেষ্ট দীর্ঘ। প্রচুর নিয়ম-কানুনের ফাঁস রয়েছে। সেই সব শর্ত মেনে এক-একটি সোর্স এসে পৌঁছনোর আগেই পুরনো সোর্সটি শেষ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে রেডিয়েশন বন্ধ থাকে বহু হাসপাতালে। ভোগান্তি বাড়ে রোগীদের। সেই কারণেই দীর্ঘমেয়াদী কোবাল্ট সোর্সের ব্যবহার বাড়ছে।
আর জি কর হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গত তিন বছরে আর জি করে প্রায় দেড় হাজার রোগীর উপরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে স্বভাবতই এখানকার চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা হবে।” আপাতত স্থির হয়েছে, বছরে দু’বার এই প্রশিক্ষণ হবে। এক-এক দফায় ৫ থেকে ৬ দিনের প্রশিক্ষণ হবে। প্রথম দফার প্রশিক্ষণ শুরু হবে মাস দুয়েকের মধ্যেই।
আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, “বিষয়টি যে কোনও রাজ্যের পক্ষেই যথেষ্ট সম্মানজনক। আমাদের চিকিৎসকেরা যে দক্ষতার দিক থেকে যে কোনও উন্নত দেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন, এটা তারই প্রমাণ।” |