হিমঘরের প্রয়োজন নেই। মাত্র দেড় থেকে দু’মিনিট একটি পাত্রে রাখা তরলে ফল বা সব্জি চুবিয়ে রাখলেই হল। তার পরে তরল থেকে তুলে রেখে দিলেই বেশ কয়েক দিন টাটকা থেকে যাবে সেই ফল বা সব্জি। অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন দিল্লি আইআইটি-র রসায়ন বিভাগের একদল গবেষক। এই তরলের নাম ফ্রু-ওয়াশ। ওই গবেষকদের দাবি, নতুন এই তরল ইতিমধ্যেই হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষত, হিমাচলপ্রদেশে ফ্রু ওয়াশের মাধ্যমে ফল সংরক্ষণ করে রফতানিও করা হচ্ছে। উপকৃত হচ্ছেন চাষিরাও। পশ্চিমবঙ্গেও এই ফ্রু-ওয়াশের মাধ্যমে কী ভাবে চাষিরা উপকৃত হতে পারেন, সেই দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টোম্যাটো থেকে শুরু করে ক্যাপসিকাম, আপেল, পেয়ারা সব ধরনের ফল ও সব্জি এই ফ্রু-ওয়াশে দেড় থেকে দু’ মিনিট চুবিয়ে রাখলে বহু দিন টাটকা থাকবে বলে দাবি করেছেন কলকাতায় ফ্রু-ওয়াশ বিপণনের দায়িত্বে থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সেক্রেটারি অনিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এক একটি ফল বা সব্জির ক্ষেত্রে টাটকা থাকার মেয়াদ আলাদা হবে। দিল্লির ওই গবেষকদের আরও দাবি, নতুন এই তরল সব চেয়ে কাজে লাগবে যে কোনও সব্জি বা ফল রফতানির ক্ষেত্রে। অনিতাদেবী বলেন, “আমাদের রাজ্যে যে সব কৃষকদের হিমঘরে সব্জি রাখার সামর্থ্য নেই, তাঁরা এই ফ্রু-ওয়াশ ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। রাজ্যের যে সব জায়গায় হিমঘর নেই, সেখানে অনেক কম খরচে ফ্রু-ওয়াশ তৈরির ছোট কারখানা তৈরি করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে কথা বলেছি।” খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ফ্রু-ওয়াশের বিষয়টি জানি। রাজ্যের চাষিরা যদি উপকৃত হন, তা হলে আমরা নিশ্চই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখব। এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে।”
গবেষকেরা জানিয়েছেন, হিমঘর চালাতে বিদ্যুৎ খরচ হয় প্রচুর। তা ছাড়া, হিমঘরে রাখা ফল বা সব্জিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাসায়নিকও দিতে হয়। তবে তাঁদের দাবি, ফ্রু-ওয়াশে কয়েক মিনিট চুবিয়ে তুলে রাখা সব্জিতে কোনও রাসায়নিক দিতে হয় না। সব্জি সংরক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ-খরচও নেই। তবে, এখনও পর্যন্ত এই তরলের দাম কিছুটা বেশি বলেই দাবি করেছেন অনিতাদেবী। তিনি জানিয়েছেন, এক লিটার ফ্রু-ওয়াশের দাম ৪০০ টাকা। ফলে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর দাম কিছুটা বেশি। অনিতাদেবী বলেন, “আগের থেকে দাম কিছুটা কমলেও সাধারণের ব্যবহারের জন্য দাম আরও কমা দরকার। তবে চাষিরা এই তরল না কিনে যদি ছোট কারখানায় নিজেরাই তৈরি করেন, তা হলে অনেক সুবিধা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে দাম আরও কমে যাবে।” |