দরের ফাঁসেই পণ্য খালাসে জট হলদিয়ায়
লদিয়া বন্দর থেকে এবিজি বিদায় নিয়েছে ১৪ মাস আগে। বন্দরের দুই এবং আট নম্বর বার্থে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাস ব্যবস্থা চালু করতে চেয়ে তার পরে তিন-তিন বার দরপত্র চেয়েছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আগ্রহী সংস্থাগুলি এমন দর হেঁকেছে যে, ওই দু’টি বার্থে আধুনিক পদ্ধতিতে পণ্য খালাস শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
অনিশ্চয়তা কেন?
বন্দরকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ দরপত্রে আগ্রহী সংস্থাগুলি পণ্য খালাসের জন্য যে-টাকা চেয়েছে, তা মিটিয়ে যা আয় হবে, তাতে হলদিয়া বন্দরের লোকসান আরও বেড়ে যাবে। কর্তাদের একাংশের হিসেব, এবিজি থাকাকালীন প্রতি টনে বন্দরের আয় হত ১৫০ টাকা। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় সেটা হবে মাত্র ৬৫ থেকে ৭৪ টাকা।
তা হলে কি ওই দু’টি বার্থে আর যন্ত্রে পণ্য খালাস করা সম্ভব নয়?
বন্দরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, টন-প্রতি পণ্য খালাসের দর না-কমলে যন্ত্রের সাহায্যে আধুনিক পদ্ধতিতে পণ্য ওঠানো-নামানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন হলদিয়ার বিভিন্ন বার্থে যে-ভাবে পণ্য খালাস হয়, তাতে এই দর কমার সম্ভাবনাও নেই।
সম্ভাবনা নেই কেন?
ওই বন্দরকর্তাদের বক্তব্য, জাহাজ থেকে পণ্য নামিয়ে রেলের রেকে তোলা পর্যন্ত পুরো পদ্ধতিতে দু’-একটি সংস্থার একচেটিয়া কারবার চলছে বলেই দর কমা সম্ভব নয়। একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটিয়ে যদি নিলামের মাধ্যমে সংস্থা বাছাই শুরু হয়, পণ্য খালাসের দর নেমে যাবে। অর্থাৎ মুক্ত প্রতিযোগিতা দরকার। পণ্য খালাসে প্রতিযোগিতা শুরু হলে বন্দর ব্যবহারকারীরা সস্তায় আমদানি-রফতানি করতে পারবেন। তাতে বন্দরেরও আয় বাড়বে।
হলদিয়ার এখনকার পণ্য খালাসকারী সংস্থাগুলির একাংশ অবশ্য নিলামের পথে সমস্যা মিটবে বলে মনে করছে না। তাদের মতে, দেশের অন্যান্য বড় বন্দরের কোথাও পণ্য খালাসে নিলাম নীতি নেওয়া হয়নি। ফলে শুধু হলদিয়াতেও তা সম্ভব নয়। হলদিয়ার বাস্তব পরিস্থিতি না-বুঝেই এবিজি কম দরে কাজ নিয়েছিল। এক বছরের মধ্যে তাদের এতই লোকসান হয় যে, তারা বন্দর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। হলদিয়ায় দীর্ঘদিন পণ্য খালাস করছে, এমন একটি সংস্থার দাবি, “বন্দর দুই এবং আট নম্বর বার্থে যে-পদ্ধতিতে পণ্য খালাস করতে চাইছে, তা অবাস্তব।”
বন্দরের অন্দরমহলের অনেকেই জানাচ্ছেন, যন্ত্রে পণ্য খালাসের উদ্দেশ্য ছিল পণ্য ওঠানো-নামানোর খরচ কমিয়ে বন্দরের আয় বাড়ানো। কিন্তু দু’-একটি সংস্থার একচেটিয়া কারবারের জন্য পণ্য খালাসে নিলাম নীতি নেই। তাই সেই কাজ করা যাচ্ছে না। এখন বন্দর-কর্তৃপক্ষ সামগ্রিক ভাবে পণ্য খালাসের সংস্থা নির্বাচনে নিলাম করলেই দর নামবে, নচেৎ নয়। কিন্তু দেশের অন্যান্য বন্দরে এমন ব্যবস্থা কার্যকর না-হলে শুধু হলদিয়ায় তা চালু করার ক্ষেত্রে জাহাজ মন্ত্রকের সায় নেই বলেই জানাচ্ছেন অফিসারদের একটি অংশ।
এবিজি-বিদায়ের পরে হলদিয়ার দুই এবং আট নম্বর বার্থে যন্ত্রে পণ্য খালাসের জন্য তিন বার দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্দরের চাহিদামতো দর না-মেলায় প্রথম দু’দফার দরপত্র বাতিল করা হয়। শেষ দফায় পণ্য খালাসে আগ্রহী আটটি সংস্থা বন্দরকর্তাদের সঙ্গে (প্রি-বিড) আলোচনা করতে এসেছিল। তাদের মধ্যে ছিল আদানি গোষ্ঠীও। হলদিয়ার সব চেয়ে কাছের প্রতিযোগী, ওড়িশার ধামরা বন্দর নিজেদের হাতে নিচ্ছেন আদানিরাই। তাঁরা ছাড়াও কনকাস্ট, ইউনিভার্সাল সিপোর্টস, ওড়িশা স্টিভেডরস, টিএমআইএলএল, রিপ্লে, আইএসএইচপিএল এবং জেএম বক্সী ওই দু’টি বার্থে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাসে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত মাত্র দু’টি সংস্থা ডিসেম্বরের শেষে চূড়ান্ত দরপত্র জমা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দর দেয় আইএসএইচপিএল। তারা টন-প্রতি ২১১ টাকা দরে পণ্য খালাস করতে রাজি হয়েছে। ওড়িশা স্টিভেডরস দর দিয়েছে ২১৯ টাকা। বন্দর প্রতি টন পণ্য খালাসে ২৮৫ টাকা পর্যন্ত ফি নিতে পারে। ২১১ বা ২১৯ টাকার দরপত্র মেনে নিলে আরও সামান্য কিছু খরচ বাদ দিয়ে টন-প্রতি মাত্র ৬৫ থেকে ৭৪ টাকা লাভ হবে হলদিয়ার। এক কর্তার কথায়, “এই সামান্য লভ্যাংশে রসাতলে যাবে হলদিয়া বন্দর।”
আইএসএইচপিএল-এর অন্যতম কর্ণধার সৌমিক বসু বলেন, “আশা করব, সর্বনিম্ন দর দেওয়ায় ওই দু’টি বার্থে পণ্য খালাসের বরাত আমাদেরই দেওয়া হবে। কারণ, শুধু মোবাইল হারবার ক্রেন বসিয়ে নয়, বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের হাত ধরেই হলদিয়ায় পূর্ণাঙ্গ যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাস ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল।”
কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এখনও দুই এবং আট নম্বর বার্থের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। বন্দরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সবে দরপত্র খোলা হয়েছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বার প্রতি টন ১৭১ টাকা দরে পণ্য খালাসের দরপত্র বাতিল হয়েছিল। এ বার সর্বনিম্ন দর এসেছে ২১১ টাকা। তাই কী ভাবে এই দর গ্রাহ্য করা যাবে, তা নিয়ে টেন্ডার কমিটি আলোচনা করবে। ওই কর্তার কথায়, “এ বার যে-সংস্থা সর্বনিম্ন দর দিয়েছে, তাদের ডেকে তা আরও কমাতে বলা হতে পারে। টন-প্রতি ১৬০ টাকার কাছাকাছি দর দিলে বরাত দেওয়া হতে পারে তাদেরই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.