এ যেন আক্ষরিক অর্থেই ফুটবলের উৎসব। ২০-৩০ কিংবা ৫০-১০০, চারশোরও বেশি! একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ফুটবলারের সংখ্যা নয়, পুরুলিয়ার একটি প্রতিযোগিতায় মাঠ মাতাল ৪৮৬টি ফুটবল দল।
প্রতিযোগিতার পোশাকি নাম ‘সুষেণ বেলথরিয়া স্মৃতি ফুটবল’। সেটি হয়েছে কাশীপুর ব্লকে। কিন্তু, মাসখানেকের এই ফুটবল উৎসবে পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের খেলোয়াড়দের অভিমুখ ছিল পঞ্চকোটরাজের বিভিন্ন ময়দান। রবিবার ফাইনালে এসে প্রাক্তন তারকা ফুটবলার, বর্তমানে সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটা বিধানসভা এলাকায় এতগুলো দল এক সঙ্গে ফুটবল খেলছে দেখে আমি অভিভূত। এই মুহূর্তে রাজ্যের কোনও বিধানসভা এলাকায় এ দৃশ্য দেখা যাবে কি না, আমার জানা নেই। অতীতেও দেখিনি।” সম্প্রতি এখানেই শেষ হয়েছে মহিলাদের ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেখানে অংশ নিয়েছিল ২২৫টি দল।
বস্তুত, গত কয়েকদিন ধরে কাশীপুরে চর্চার বিষয় ছিল এই ফুটবল প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থাকা রাজ্য ক্রীড়া দফতরের ফুটবল প্রশিক্ষক প্রবীর ভট্টাচার্য, আলি হোসেনদের কথায়, “ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা।” ক্রীড়া দফতরের আর এক প্রশিক্ষক বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ও এখানে টানা রয়েছেন প্রতিভা খোঁজার জন্য। জঙ্গলমহলে ফুটবল নিয়ে বেশ কয়েক বছর কাজ করছেন প্রবীরবাবু। বললেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা দুশো ছেলেকে বেছেছি। এখানেই একটা আবাসিক প্রশিক্ষণ শিবির হবে। সেই শিবির থেকে ৪০ জনকে বেছে আমরা রাজ্যস্তরে ট্রায়ালে পাঠাব।” |
রবিবার ফাইনালে মুখোমুখি হয় সাঙ্গেগোড়া আদিবাসী নাওয়া সাগেন গাঁওতা এবং স্থানীয় মণিহারা ধর্মরাজ ফুটবল ক্লাব। সাঙ্গেগোড়াতে ৩-০ গোলে হারিয়ে খেতাব জেতে মণিহারা। ম্যাচ ও প্রতিযোগিতার সেরা যথাক্রমে মণিহারা দলেরই বিদ্যুৎ বাউরি ও শ্রীরাম সরেন। ফাইনাল ম্যাচের প্রধান অতিথি হিসেবে এখানে এসে প্রসূনবাবু উপস্থিত ছেলে ও মেয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ নেন। প্রসূনবাবুর কথায়, “আমিও এক দিন এঁদের মতো ছিলাম। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি, সবই ফুটবলের জন্য। সেই কথা এঁদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়, সেটাই এঁদের বোঝাতে চেয়েছি।” খুদে প্রতিভাদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি মেসির উদাহরণ যেমন দিয়েছেন, তেমনই নিজের ফুটবল জীবনে ব্রাজিলের কসমসের সঙ্গে মোহনবাগানের ম্যাচের কথা বা আর্জেন্টিনার সঙ্গে প্রথম নেহরু কাপের ম্যাচের কথা স্মরণ করিয়ে বাংলার ফুটবলের সুদিন ফেরানোর কথা বলেছেন প্রসূন।
দুশোরও বেশি দল নিয়ে এখানে মহিলাদের ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে জেনে প্রসূনবাবুর আশ্বাস, এখানে যাতে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ার ব্যাপারে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে প্রস্তাব দেবেন। প্রসূনবাবু বলেন, “এখানে যা দেখছি, তা একেবারে ফুটবল উৎসব। এই প্রতিযোগিতা এখানকার বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া একক উদ্যোগে করেছেন। এ ভাবে বছরের পর বছর করা সম্ভব নয়। তাই এই ফুটবল উৎসবে যাতে সরকারি সহায়তা থাকে, সে চেষ্টাও আমি করব।” মাঠ দেখে তিনি জানান, কলকাতা লিগের কোনও ম্যাচ এখানে দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে তিনি আইএফএ-র সঙ্গে কথা বলবেন। স্থানীয় খেলোয়াড়রা উৎসাহিত হবে।
প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা, বিধায়ক স্বপনবাবু বলেন, “আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, ছেলেমেয়েদের মাঠমুখো করা। এ বার আমাদের লক্ষ্য, এই এলাকা থেকে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে কিংবা কলকাতা ময়দানের জন্য প্রতিভাদের তুলে আনা। এর পর এখানে ফুটবলের একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হবে।” স্বপনবাবু উৎসাহিত হতেই পারেন। কেন না মাস দেড়েক আগে হুড়ায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় নাইজেরীয় একটি দলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছে জঙ্গলমহলের দল।
ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের খেলোয়াড় সুনীল মুর্মু, প্রদীপ মুর্মু, শ্রীরাম সোরেন, প্রশান্ত সোরেনরা বলেন, “এ রকম ভাবে সকলে এগিয়ে এলে আমরাও পারব আশা করছি। শুধু আমাদের আধুনিক অনুশীলনের সুযোগ প্রয়োজন।” |