বিষ্ণুপুর উৎসব কি আদৌ হবে, প্রশ্ন
বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে পর্যটন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই মেলার মাঠেই দু’দিন পরে শুরু হবে বিষ্ণুপুর উৎসব। কিন্তু ডিসেম্বর মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পর্যটন দফতরের আয়োজিত বিষ্ণুপুর উৎসব না হওয়ায় নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
মন্দির নগরী হিসেবে যেমন বিষ্ণুপুরের খ্যাতি রয়েছে, তেমনই এখানকার ঊচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পৃথক ঘরনার খ্যাতিও সমান জনপ্রিয় সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে। তাই এখানকার সংস্কৃতি গানকে কেন্দ্র করেই চার বছর আগে বিষ্ণুপুর উৎসবের আয়োজন করে রাজ্য পর্যটন দফতর। প্রতি বছর ২৩ ডিসেম্বর থেকে বিষ্ণুপুর মেলা শুরু হয়। মেলা শেষে রাসমঞ্চের সামনে ২৮ ডিসেম্বর থেকে তিন দিনের বিষ্ণুপুর উৎসব শুরু হয়। গত চার বছর ধরে ওই সময়েই বিষ্ণুপুর উৎসব হয়ে আসছিল। কিন্তু এ বার তাল কেটে গিয়েছে।
উৎসবের এই চেনা ছবি এ বছর দেখা যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।—ফাইল চিত্র।
এ বার নতুন বছর শুরু হওয়ার পরেও ওই উৎসব আদৌ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় প্রশাসন। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের গোড়াতেই বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য পর্যটন দফতর উৎসবের আয়োজন করা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে দেয়। এ বার কিন্তু তা করা হয়নি। বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “বিষ্ণুপুর উৎসব কেন হল না বা পরে হবে কি না কিছুই বলতে পারছি না। পর্যটন দফতর আমাদের কিছুই জানায়নি।” উৎসব নিয়ে কোনও খবর দিতে পারেননি বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, পর্যটন মন্ত্রী তো বিষ্ণুপুরে এসে বলে গিয়েছিলেন উৎসব হবে। কিন্তু এখনও কেন হল না জানি না।”
২৩ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর মেলার উদ্ধোধন করতে এসে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেছিলেন, “এই মেলার মাঠেই ২৫, ২৬, ২৭ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর উৎসব হবে।” কিন্তু কেন হল না? পর্যটনমন্ত্রী শুক্রবার বলেন, “এ বার বিষ্ণুপুর মেলা কমিটি ওই মেলার সঙ্গেই বিষ্ণুপুর উৎসব করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। কিন্তু বিষ্ণুপুর উৎসব এখনও হয়নি। মনে হচ্ছে কোথাও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।” এ বার কি তবে বিষ্ণুপুর উৎসব হচ্ছে না? পর্যটন মন্ত্রীর সদুত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, “কথা বলছি। দেখা যাক কী করা যায়।”
রামশঙ্কর ভট্টাচার্য, বাহাদুর খান, যদুভট্ট, জ্ঞান গোঁসাই, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি জড়িত বিষ্ণুপুর ঘরানার গান এ বার রাসমঞ্চের সামনে শোনার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষুদ্ধ সঙ্গীত প্রেমীরা। গত চার বছর ধরে এই উৎসবে রশিদ খান, অরুণ ভাদুড়ি, সমরেশ চৌধুরী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বিশ্বমোহন ভাট, নিশাদ খান, অমিতা দত্ত প্রমুখ সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পীরা অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁদের সঙ্গে ওই মঞ্চে গান গেয়েছেন স্থানীয় শিল্পীরাও।
এই মেলার মাঠেই ২৫, ২৬,
২৭ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর উৎসব হবে।
পর্যটন মন্ত্রী তো বিষ্ণুপুরে বলে গিয়েছিলেন
উৎসব হবে। কেন হল না জানি না।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বস্ত্রমন্ত্রী
নির্ধারিত দিন পেরিয়ে গেলেও এ বার এমন একটি অনুষ্ঠান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় শিল্পীরা। প্রশ্ন তুলেছেন, “তা হলে কি বন্ধ হয়ে গেল এমন একটি স্মরণীয় অনুষ্ঠান?” বিষ্ণুপুর ঘরানার অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী বামাপদ চক্রবর্তী বলেন, “বিষ্ণুপুর মেলা উদ্বোধনে এসে পর্যটন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন দু’দিন পরেই উৎসব হবে। কিন্তু তা তো হল না। নির্ধারিত দিনেও হল না। তা হলে কি ধরে নেব ওই উৎসব এ বার বন্ধ হয়ে গেল?” আরও এক শিল্পী জগন্নাথ দাশগুপ্তের গলাতেও ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছে। তিনি বলেন, “চার বছরে উৎসব এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে বাইরের বহু শ্রোতা আসতে শুরু করেছিলেন। প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত মুক্ত মঞ্চে এই অনুষ্ঠান দেখতেন তাঁরা। বহিরাগত শিল্পীদের গান শুনে আমরা যেমন সমৃদ্ধ হতাম, তেমনই আমরাও নিজেদের তুলে ধরতে পারতাম। উৎসব না হওয়ায় খুব খারাপ লাগছে।” বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা তথা আচার্য যোগেশচন্দ্র সংগ্রহশালার সচিব চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “এই উৎসবে বিষ্ণুপুরের প্রকৃত সংস্কৃতির চেহারা উঠে আসত। এ বার কেন হচ্ছে না জানি না। কিন্তু এই সঙ্গীতানুষ্ঠানটি হওয়া উচিত ছিল।”
উৎসব না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী থেকে পর্যটকদের মধ্যেও। কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসা সুবিকাশ রায় বলেন, “প্রতিবার ২০ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর উৎসব হত। তাই এ বারও ওই অনুষ্ঠান হচ্ছে ভেবে এসেছিলাম। কিন্তু বিষ্ণুপুর উৎসব হচ্ছে না, একটু হতাশ হয়েই ফিরছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.