পরিত্যক্ত মুরগি খামার, অতলে স্বনির্ভরতার লক্ষ্য
ক্ষ্য ছিল স্ব-সহায়ক দলের মহিলাদের মুরগি পালনের মাধ্যমে স্বনির্ভর করা। তাই পাঁচ বছর আগে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে তৈরি হয়েছিল মুরগি খামার। কিন্তু অধিকাংশ খামারেরই এখন পরিত্যক্ত দশা। অনেক খামারের ছাউনি ভেঙে পড়েছে। চারদিক ভরে গিয়েছে আগাছায়। সব মিলিয়ে স্বনির্ভর করার লক্ষ্য এখন বিশ বাঁও জলে! খামার চালাতে না পেরে কাঠ-পাতা কুড়নোর পুরনো পেশাতেই ফিরে গিয়েছেন গৌরী হাতি, সাবিত্রী খিলাড়িরা।
কেন এমন হল?
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমরা শুরুটা করে দিয়েছিলাম। খামার তৈরি করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। মুরগিও কিনে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষে তো আর আজীবন সাহায্য করে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা ভেবেছিলাম ওরা লাভের টাকায় খামারের আয়তন বাড়াবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই ব্যবসা বাড়াতে পারেনি। যারা পেরেছে, তারা চালাচ্ছে।”
জামবনির সাপধরায় পরিত্যক্ত মুরগি খামার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬-০৭ ও ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর (১৪টি), শালবনি (৩টি), গড়বেতা-২ (৮টি), খড়্গপুর-১ (৬টি), কেশিয়াড়ি (৭টি), ঝাড়গ্রাম (১৬টি), বিনপুর-১ (৩টি), বিনপুর-২ (১২টি), সাঁকরাইল (৫০টি), জামবনি (৩০টি)-এই ১০টি ব্লকে ১৪৯টি মুরগি খামার তৈরির পরিকল্পনা নেয় সরকার। প্রতিটি খামারে খাবার রাখা, স্ব-সহায়ক দলের সদস্যদের বসার জন্য ঘর করা হয়। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিডিওদের। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে কাজের হাল হকিকত জানতে চেয়ে বিডিওদের চিঠিও দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক। প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগকে মুরগির বাচ্চাও দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেই সময় কিছু খামারে মুরগি পালনও হয়।
কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়ে যায়। প্রাণিসম্পদ দফতরের আধিকারিকেরা সম্প্রতি ১৩৯টি মুরগি খামার ঘুরে দেখেন মাত্র ১৫টি মুরগি খামার ভাল অবস্থায় রয়েছে। ৭১টি খামারের অবস্থা খুবই খারাপ। ওই খামারগুলির আগাগোড়া সংস্কারের প্রয়োজন। ৫৩টি খামারের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু সংস্কার করলেই তা চালু করা যাবে। আর যে ১৫টি-র অবস্থা ভাল তার মধ্যে ১১টিতে মুরগি পালন চলছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করেছে প্রাণি সম্পদ বিকাশ দফতর। কিন্তু সেগুলি চালাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বিনিময়ে স্ব-সহায়ক দলকে খামারের ভাড়া হিসাবে কিছু টাকা দেন! প্রশ্ন হল, স্ব-সহায়ক দলের সদস্যরা কেন খামারগুলি চালাতে পারলেন না? দলের সদস্য মালতী ঘোষ, নমিতা মাহাতোদের কথায়, “মুরগির বাচ্চা কোথা থেকে আনব? মুরগির রোগ হলে চিকিৎসা করাব কোথায়? প্রথমে এ ব্যাপারে সরকার সাহায্য করত। তাই করতে পেরেছিলাম। পরে সরকারি সাহায্য না মেলায় বন্ধ করে দিই। কারণ, মুরগিতে একবার মড়ক লাগলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। তখন অত টাকায় কোথায় পাব।” ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা গ্রামের সংগ্রামী চেতনা, লালকেল্লা চেতনা বা পল্লি উন্নয়ন স্ব-সহায়ক দলের সদস্য খাঁদি হাতি, মুক্তি খিলাড়ীদের কথায়, “প্রথম দু’বার সরকার মুরগির বাচ্চা দিয়েছিল। খাবার দিয়েছিল। আমরাও মুরগির চাষ করে লাভ করেছিলাম। তারপর থেকে আরও কারও দেখা মেলেনি। আমরাও মুরগি পালন বন্ধ করে পেটের তাগিদে জঙ্গলে যেতে শুরু করি। পাতা, কাঠ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে আগের মতোই সংসার চালাতে শুরু করি।”
এ দিকে, বিষয়টি জানতে পারার পর ফের নতুন করে খামারগুলি চালু করার জন্য পদক্ষেপ করছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট বলেন, “এর পিছনে কী রহস্য রয়েছে, কেন এতগুলি খামার বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখব। তারপর ফের মুরগি পালনের মাধ্যমে স্ব-সহায়ক দলের উন্নয়নের চেষ্টা করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.