মাদার হাউসে যাওয়ার ব্যবস্থা হতে
ইউসেবিওর সেই হাসিটা ভুলব না
উসেবিও আর নেই! দুঃসংবাদটা রবিবার দুপুরের দিকে টিভিতেই প্রথম জানতে পারলাম। বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র একাত্তর বছরে চলে গেলেন বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের প্রবল প্রতিভার অধিকারী।
দুঃসংবাদটা পাওয়ার পর থেকেই মনটা খারাপ। ইউসেবিও তো আমাদের খেলোয়াড়জীবনেই বিশ্ব ফুটবল দাপিয়েছেন। উনি যখন পেলের সঙ্গে সমানে সমান তাল ঠুকছেন, তখন আমরা এশিয়া চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল দাপানো চ্যাম্পিয়ন যে এত বিনয়ী, সেটা চব্বিশ বছর আগে এই কলকাতাতেই ইউসেবিওর সঙ্গে প্রথম পরিচয়তেই বুঝতে পেরেছিলাম। একদম মাটিতে পা রেখে চলা মানুষ। এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, নব্বইয়ের নেহরু কাপে যুবভারতীতে এই ইউসেবিওর পাশে বসে আমি খেলা দেখেছি!
সেখানেই তাঁকে বলে ফেলেছিলাম, “আপনি যখন পর্তুগালের জার্সি গায়ে বিশ্ব ফুটবলে খ্যাতির মধ্যগগনে তখন আমরাও এশিয়া সেরা ছিলাম।” ভেবেছিলাম কথাটাকে হয়তো পাত্তা দেবেন না। কিন্তু অবাক করে আমার দিকে ফিরে বলেছিলেন, “তাই নাকি! তুমি তো তা হলে কলকাতার স্টার। আমাকে মিশনারিজ অব চ্যারিটিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে? মাদার টেরিজার আশীর্বাদের জন্য সেই কবে থেকে বসে আছি।”

কলকাতা। ১৯৯০
শুনেই আমি তখনকার ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সিকে গিয়ে ইউসেবিওর সেই ইচ্ছের কথা জানাই। প্রিয় সঙ্গে সঙ্গে মাদার হাউসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পর ইউসেবিওর হাসিমুখটা আজও চোখে ভাসছে। তাঁর থেকেই শুনেছিলাম ছোটবেলায় দারিদ্রের সঙ্গে লড়ে বড় হওয়ার কিছু অসাধারণ কাহিনি। বলেছিলেন, পনেরো বছর বয়সে ওঁকে দলে নেওয়ার জন্য জুভেন্তাস স্কাউট পাঠিয়ে দিয়েছিল মোজাম্বিকে। কিন্তু ইতালিতে না গিয়ে তিনি চলে এসেছিলেন লিসবনে। যেখান থেকেই ইউসেবিও ফুটবল দুনিয়ার ‘ব্ল্যাক পার্ল’ হয়ে ওঠেন।
কত বড় ফুটবলার? ইউসেবিওর রেকর্ডই ওঁর হয়ে কথা বলে। দীর্ঘ দিন ইউরোপের ফুটবলে তো চুটিয়ে খেলেছেনই, ছেষট্টির বিশ্বকাপে হায়েস্ট স্কোরার! পেলে, গ্যারিঞ্চা, জিওফ হার্স্ট, চার্লটন ভাইয়েরাতারকার ছড়াছড়ি যে বিশ্বকাপে, সেখানেও জ্বলজ্বল করেছে ইউসেবিওর ফুটবল দক্ষতা। ন’গোল করেছিলেন একটা বিশ্বকাপেই। যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পর্তুগালের সেই অবিশ্বাস্য কামব্যাক ম্যাচে চার গোল! বিশ্বকাপের ইতিহাসেই যে ম্যাচ সেরা কামব্যাক ম্যাচ হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ০-৩ পিছিয়ে ৫-৩ জেতা! এখনও ভাবলেই কেমন অবাক লাগে।
আজ যেমন মেসি না রোনাল্ডো কে সেরা তা নিয়ে দুনিয়া জুড়ে তর্ক, তেমনই আমাদের ফুটবলার জীবনেও একটা তর্ক ছিল পেলে না ইউসেবিও কে সেরা? ইউসেবিও কলকাতায় এলে এখানকার সাংবাদিকরাও সেই প্রশ্ন করেছিলেন। মনে আছে, স্বয়ং ইউসেবিও সেই প্রশ্ন শুনে বলেছিলেন, “পেলেই সেরা। আমি নই। তবে সেরাদের তালিকায় আমরা দুই কৃষ্ণাঙ্গই থাকব।”
তবে দু’জনের পুরনো দিনের খেলার ফুটেজ দেখে কিছু জায়গায় পেলের চেয়ে ইউসেবিওকে এগিয়ে রাখব। পেলের মতো ড্রিবল না থাকলেও ওঁর অসাধারণ চোরা গতি, আচমকা গোলে দূরপাল্লার শট নেওয়ার দক্ষতা, ফ্রিকিক দু’চোখ ভরে দেখার মতো। তা সত্ত্বেও একটা কথাই সবার শেষে বলব দু’জনের মধ্যে তুলনা হলেও ইউসেবিও পেলে নন। তবে ফুটবলরসিকের হৃদয়ে চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন ইউসেবিও-ও।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.