আঙ্গোলার এক শ্বেতাঙ্গ রেল-লাইন কর্মী লরিন্ডো এবং তাঁর স্ত্রী, মোজাম্বিকের কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে এসিলার সন্তান ইউসেবিওর শৈশব কাটে চূড়ান্ত আর্থিক অনটনের মধ্যে। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারানো ছেলেটি স্কুল পালিয়ে অলি-গলিতে ফুটবল খেলত বন্ধুদের জুটিয়ে। বুট তো দূরের কথা, বল পর্যন্ত ছিল না। ছেঁড়া মোজা, খবরের কাগজ এই সব দলা পাকিয়ে বল বানিয়ে খেলা চলত। কিন্তু প্রতিভা চাপা থাকল না। দু’পায়েই শট মারার সমান ক্ষমতা, গতি, স্কিল, ড্রিবলিং (যাকে পরবর্তী কালে বেড়ালের মতো বলা হত) আর শক্তির জন্য নজর কাড়া শুরু করেন ইউসেবিও। জুভেন্তাসের এক ট্যালেন্ট স্কাউট তাঁকে নিতে চাইলে ছেলেকে ইতালি পাঠাবেন না, জানিয়ে দেন এলিসা। এর পর পনেরো বছর বয়সে স্পোর্টিং লিসবনের ফিডার ক্লাব স্পোর্টিং ডে লরেন্সো মারকেস তাঁকে সই করায়। এর তিন বছরের মাথায় আঠারো বছর বয়সে বেনফিকা তুলে নেয় তাঁকে।
এখানেও দারুণ একটা গল্প! লিসবনের এক সেলুনে বসে ব্রাজিলের ক্লাব সাও পাওলোর এক কোচ মোজাম্বিকে দেখা এক তরুণের দারুণ প্রশংসা করছিলেন। যে কিনা মাত্র ১১ সেকেন্ডে একশো মিটার দৌড়োয়। সঙ্গে দুরন্ত সব শটে গোল করে। যাঁর কাছে প্রশংসাটা করছিলেন তিনি ছিলেন বেনফিকার কিংবদন্তি কোচ বেলা গাট্টামান। ব্যস, ইউসেবিওকে সই করিয়ে ফেলে বেনফিকা। কিন্তু ইউসেবিও তাদের বলে দাবি করে প্রবল হইচই ফেলে স্পোর্টিং লিসবন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে আলগার্ভে নামে এক জেলে-গ্রামে ইউসেবিওকে ছদ্মনামে লুকিয়ে রাখে বেনফিকা। বেনফিকার হয়ে ইউসেবিওর অভিষেক পর্তুগিজ কাপে ১ জুন, ১৯৬১-তে। এর দু’সপ্তাহ পরে প্যারিসে এক প্রীতি ম্যাচে পেলের সান্টোসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো হয়েছিল তাঁকে। দল ০-৪ পিছিয়ে। এই অবস্থায় হ্যাটট্রিক করে যান ইউসেবিও। পেলে সে দিন দেখেছিলেন নতুন তারকার উত্থান। |
ইউসেবিও দ্য সিলভা ফেরেরা |
|
ডাক নাম ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’, ‘ব্ল্যাক পার্ল’ ও ‘রেই’ (দ্য কিং)
জন্ম ২৫ জানুয়ারি, ১৯৪২, মাপুটো মোজাম্বিক
মৃত্যু ৫ জানুয়ারি, ২০১৪
পজিশন ফরোয়ার্ড
গোল সংখ্যা ৭৪৫ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৭৩৩
জাতীয় দল (পর্তুগাল) ৬৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪১ গোল
প্রধান ক্লাব বেনফিকা
কেরিয়ার শুরু স্পোর্টিং লিসবনের নার্সারি ক্লাব স্পোর্টিং ডে লরেন্সো মারকেস-এ |
সম্মান
• ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ৯ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সোনার বুট। কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ০-৩ পিছিয়েও ইউসেবিওর ৪ গোলে পর্তুগাল শেষ পর্যন্ত জেতে ৫-৩। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ হেরে কেঁদে মাঠ ছেড়েছিলেন ইউসেবিও। তৃতীয় স্থানে শেষ করে পর্তুগাল।
• ইউরোপিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন ১৯৬২, সর্বোচ্চ গোলদাতা ১৯৬৫, ১৯৬৬, ১৯৬৮।
• ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার ১৯৬৫, দ্বিতীয় স্থান ১৯৬২ ও ’৬৬।
• ইউরোপের গোল্ডেন বুট ১৯৬৮, ১৯৭৩। |
সব যুগেই চিরকালীন, ইউসেবিও, রেস্ট ইন পিস।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
দ্য কিং! আমাদের সবার জন্য এটা বিরাট ক্ষতি! দ্য গ্রেটেস্ট!
লুই ফিগো
আমার মতে ইউসেবিও অমর। ফুটবল, বিশেষ করে পর্তুগিজ ফুটবলের জন্য উনি কী ছিলেন সেটা আমরা সবাই জানি। ইউসেবিও শুধু এক মহান প্রেরণার নামই নয়, ফুটবলের আদর্শ, মূল্যবোধ আর খেলাটাকে ঘিরে থাকা বিশেষ আবেগটার প্রতীক ছিলেন উনি।
হোসে মোরিনহো |
|