লোকশিল্পীদের সাহায্যে উদ্যোগ
নুষ্ঠানে ডাক পেলে তবেই কিছু রোজগার। না হলে সংসার চালাতে ভরসা দিনমজুরি। এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন পূর্বপুরুষের পরম্পরা ধরে রাখা লোকশিল্পীরা। আর্থিক ভাবে তাঁদের সাহায্য করতে পরিচয়পত্র প্রদান থেকে শুরু করে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগেই। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ বার চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই ওই কাজ শেষ করতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কৌশিক নন্দী বলেন, “সমস্ত শিল্পীই যাতে পরিচয়পত্র পান, এক জনও যাতে ভাতা থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সকলকেই আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে। তারই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচারেও লোকশিল্পীদের কাজে লাগানো হচ্ছে।”
রবিবার ‘লোক উৎসব-২০১৪’ শুরু হল মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর হল প্রাঙ্গণে। কেন্দ্রীয়
সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং লোকছন্দের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব চলবে আজ, সোমবার পর্যন্ত।
এ দিন কাশ্মীর, রাজস্থান, ত্রিপুরা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।
এ দিন উৎসবে রাজস্থানের ‘চেরি নৃত্যের’ একটি দৃশ্য। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলার ৩৭০ জন শিল্পী পরিচয়পত্র চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭৬ জনকে ইতিমধ্যেই পরিচয়পত্র দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেও কয়েকজন শিল্পীকে পরিচয়পত্র দিতে পারেন। সে জন্য ১০ জন শিল্পীর পরিচয়পত্র তৈরিও হয়ে গিয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
তবে পরিচয়পত্র পাওয়ার থেকে ভাতা পাওয়ার আবেদনপত্র জমা পড়ছে অনেক বেশি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩ হাজারের মতো আবেদনপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। কোন কোন শিল্পীরা ভাতা পাবেন তার নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। মাটির পুতুল তৈরি, ডোকরা শিল্পী, পট, দশাবতার তাস, মুখোশ প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা, ঢাক, ঢোল, সানাই, একতারা, দোতারা প্রভৃতি যন্ত্র শিল্পে যুক্ত ব্যক্তিরা, বাউল, ঝুমুর, ভাটিয়ালি, জারি, সত্যপীরের গান, পাঁচালি প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত সঙ্গীত শিল্পী, কাঠি নাচ, ঘোড়া নাচ, রণপা প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত নৃত্য শিল্পী আর মানবপুতুল, বহুরূপী, চোর চুরুনি, হালুয়া-হালুয়ানি, লোটো প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত নাট্যজগতের ব্যক্তিরা এই ভাতা পাবেন। তবে ভাতার ক্ষেত্রে আয়ের উর্ধসীমা রয়েছে কিনা তা নিয়ে নির্দেশিকায় কোনও উল্লেখ না থাকায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে থেকে যথাযথ নির্দেশিকা চাওয়া হয়েছে। তা পেলেই আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখে রাজ্যের কাছে তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু ভাতা দিলেই কী শিল্পীদের সমস্যা মিটবে?
শিল্পীদের অভিমত, শুধু ভাতা দিলে হবে না, সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ও পারিশ্রমিকের ব্যবস্থাও করতে হবে। বাউল শিল্পী খোকন মহাকালের কথায়, “ভাতা আর ক’টাকা। তা দিয়ে কী সংসার চলবে। সংসারে ৫ জন। বিঘে দেড়েক জমি চাষ করে তা চলে না। সরকারি ভাবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ দিলে ভাল হয়।” ঝুমুর শিল্পী পানমনি বেসরা বলেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রচারে আমরা কিছু সুযোগ পেয়েছি। সারা বছর ধরে যাতে এই সুযোগ মেলে তা দেখা দরকার। নতুবা শুধু ভাতার উপর নির্ভর করে সংসার চালানো কঠিন।”
প্রশাসনও জানিয়েছে, লোকশিল্পীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতা ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রচারে কাজ দেওয়ার ভাবনা চলছে। যে সংস্থা বা দল প্রচারের কাজে যুক্ত হবে, তাদেরও মাসিক একটা সাম্মানিক দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই এরকম প্রায় ৩৫টি দলকে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। প্রতিটি দলকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাতে সুযোগ দেওয়া যায় তার জন্যও পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.