ঋণের কিস্তির টাকা জমা দিতে না পারায় এক দম্পতির ট্রাক সারানো বাবদ বিমা সংস্থার দেওয়া টাকা নিজেদের কাছে রেখে দেয় একটি সংস্থা। বহু কষ্টে গাড়িটি সারাই করেন ওই দম্পতি। পরে ‘মাসলম্যান’ লাগিয়ে রাস্তা থেকে মালবোঝাই গাড়িটি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। বিমার পুরো টাকা ওই দম্পতিকে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে সংস্থাটিকে নির্দেশ দিয়েছে হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। দম্পতির আর্থিক ক্ষতি বাবদ মোটা টাকা জরিমানার হিসেবে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ওই আদালত।
আদালত সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে দশ চাকার একটি ট্রাক কেনেন সাহাগঞ্জের ডানলপ এস্টেট কোয়ার্টারের বাসিন্দা দম্পতি সর্বেন্দ্র এবং মালা তিওয়ারি। গাড়িটি মালাদেবীর নামে কেনা হয়। এ জন্য চন্দননগরের একটি সংস্থা থেকে ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিওয়াড়ি দম্পতি। মাসিক ১৭ হাজার ৭শো টাকা করে ৪৭টি কিস্তিতে ওই টাকা তাঁদের শোধ করার কথা ছিল। দম্পতির দাবি, ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা শোধ করে ফেলেন তাঁরা। কিন্তু এরপরেই বিপত্তি বাধে।
২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি বীরভূমের সিউড়িতে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। তাতে গাড়িটির যথেষ্ট ক্ষতি হয়। একটি বেসরকারি সংস্থায় গাড়িটির বিমা করানো ছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সংস্থা তিওয়াড়ি দম্পতিকে গাড়ি সারানোর খরচ হিসেবে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা দেয়। সর্বেন্দ্রবাবু বলেন, “দুর্ঘটনার পরে ঋণদাতা সংস্থাকে কিস্তির টাকা দিতে পারিনি। তাঁরা আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি ভাবে বিমা সংস্থার দেওয়া টাকাটা তুলে নেয়।” ঋণ পরিশোধের জন্য আগাম দেওয়া চেকের মাধ্যমেই ওই সংস্থা টাকা তুলে নেয় বলে জানিয়েছেন সর্বেন্দ্র। তিনি বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। বিমার টাকা ওরা নিয়ে নেওয়ায় খুব বিপদে পড়ি। হাজার অনুরোধ করলেও টাকাটা আমাদের দেয়নি। শেষে জমি বিক্রি করে গাড়ি সারাই করি। কয়েক মাস গাড়িটা বসিয়ে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু তাতেও ওরা শান্তি দেয়নি।” মালাদেবীর অভিযোগ, “গাড়ি সারানোর পরে ফের ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা। ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পোলবা থেকে ডিটারজেন্ট পাউডার নিয়ে গাড়িটি শিলিগুড়ি যাচ্ছিল। সে সময়ে বহরমপুরে ঋণদাতা সংস্থার ‘মাসলম্যানেরা’ জোর করে গাড়ি কেড়ে নেয়।”
উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন মালাদেবী। আদালতে তাঁরা জানান, ওই সংস্থার বেআইনি কাজের ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি তাঁরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযুক্ত ওই সংস্থার তরফে অবশ্য আদালতে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। আদালতের ভৌগলিক সীমার মধ্যে বিষয়টি পড়ে কিনা, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং বিষয়টি বিবেচনা করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়ে দেন, বিমা কোম্পানি শুধুমাত্র গাড়ি সারানোর জন্যই তিওয়াড়ি দম্পতিকে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা নিজেরা নিয়ে ওই ঋণদাতা সংস্থা ঠিক করেননি। ওই টাকা অবশ্যই দম্পতিকে দিয়ে দেওয়া উচিত। বিমার পুরো টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি ওই সংস্থাকে দম্পতির আর্থিক ক্ষতির জন্য ১ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা এবং মামলার খরচ চালানো বাবদ আরও ৫ হাজার টাকা অর্থাৎ ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ১৩১ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এক মাসের মধ্যে অভিযোগকারিণীকে ওই টাকা না দিলে মাসিক ৯ শতাংশ সুদ গুণতে হবে বলেও আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
গাড়ি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে চুঁচুড়া আদালতে পৃথক মামলা চলছে বলে জানান সর্বেন্দ্র। |