|
|
|
|
জমে বরফ ভূস্বর্গ, বিপাকে বাসিন্দারা
সাবির ইবন ইউসুফ • শ্রীনগর
৫ জানুয়ারি |
প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপছে ভূস্বর্গ। গত কয়েক দিনের তুষারপাতের জেরে কাশ্মীর উপত্যকার বেশির ভাগ শহরের তাপমাত্রাই এখন শূন্যের নীচে। ফলে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন এখানকার সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে গত কয়েক দিন ধরে এতটাই বরফ পড়েছে যে গোটা রাজ্য থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই গ্রামটি। শূন্যের থেকে দশ ডিগ্রি নীচে রয়েছে এখানকার তাপমাত্রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল রশিদ নাজার জানাচ্ছেন, পানীয় জল আর বিদ্যুতের সমস্যায় তাঁরা কার্যত দিশাহারা। একটা ছোট্ট ঘরে পরিবারের ন’জন মিলে রয়েছেন নাজাররা। জলের পাইপে বরফ জমে জল আসার রাস্তা বন্ধ। দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ নেই। সন্ধের পর থেকে শুধু লন্ঠনের আলোই ভরসা। তাতেই নিজেদের গরম রাখার চেষ্টা করছেন নাজাররা।
রশিদের ছেলে মনজুর বললেন, “একটা ছাউনির তলায় আমরা চার ভাই, তিন বোন আর আমাদের বৃদ্ধ বাবা-মা থাকছি। জলের পাইপ জমে। বরফের নদী ভেঙে আমার বোনেরা বাড়িতে জল আনছে। তবেই রান্না হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই বলে নিজেদের গরম রাখারও কোনও উপায় নেই।” নাজার পরিবারের মতো প্রায় একই দশা গ্রামের অন্যান্য পরিবারের। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও সাহায্য আসছে না বলেও অভিযোগ করেছেন মনজুর।
তবে কাশ্মীরের প্রত্যন্ত কোনও গ্রামই হোক বা কোনও শহর। দুর্ভোগের ছবিটা অবশ্য সর্বত্রই এক। পহেলগাম, গুলমার্গের মতো পর্যটন কেন্দ্রে তাপমাত্রা এখন শূন্যের থেকে সাত আর এগারো ডিগ্রি নীচে। প্রবল তুষারপাতের ফলে জাতীয় সড়কগুলিও অবরুদ্ধ। রাস্তায় রাস্তায় আটকে রয়েছে মালবাহী ট্রাক।
এ ভাবে আর কত দিন চলবে?
খুব একটা আশার কথা শোনাচ্ছে না আবহাওয়া দফতরও। আগামী কয়েকটা দিনে সারা রাজ্যে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে তাপমাত্রার পারদ আরও নামবে বলে সতর্কবাণী শুনিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দফতর।
শ্রীনগরেও গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা নামছে শূন্যের নীচে। তার মধ্যে ডাল লেক পুরো ঢেকে রয়েছে বরফে। আর তাতেইমাথায় হাত শিকারা মালিকদের। শিকারা অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট যেমন জানালেন, পর্যটনের মরসুমে প্রবল ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁর বক্তব্য, প্রথম প্রথম বরফ পড়ায় পর্যটকরা খুব খুশি হয়েছিলেন। হাউসবোটে থাকারও ধুম পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু ডাল লেকে পুরো বরফ জমে থাকায় ছবিটা উল্টে গিয়েছে। তিনি আরও জানালেন, দিন কয়েক আগে বরফ খুঁড়ে শিকারা যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল ডাল লেকে। কিন্তু আবার নতুন করে তুষারপাতের ফলে সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বরফে ঢাকা ডাল লেকের সৌন্দর্য্য দেখা ছাড়া পর্যটকদের আর কোনও উপায় নেই।
শিকারা করে যে সব সব্জি বিক্রেতা আসতেন, মাথায় হাত তাঁদেরও। তাঁদেরই এক জন জানালেন, কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে ব্যবসা লাটে উঠতে বসেছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, এ ভাবে আর কয়েক দিন চললে উপত্যকায় এ বার খাবারের অভাব দেখা দেবে। |
|
|
|
|
|