বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনা আঁধারেই, ভুগছে শহর
হরের দু’টি বড় রাস্তার উপর থেকে চাপ কমাতে ষাট ফুট চওড়া বিকল্প রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল দু’দশক আগে। আসানসোলের যানজট সমস্যা মেটাবে সেই রাস্তা, আশায় বুক বেঁধেছিলেন শহরবাসী। শুরু হয়েছিল প্রাথমিক প্রক্রিয়াও। কিন্তু বছর চারেক আগে থমকে যায় গোটা পরিকল্পনা। এডিডিএ -তে ক্ষমতার হাতবদলের পরেও পাল্টায়নি পরিস্থিতি। ফলে, জি টি রোড শশীভূষণ গড়াই রোডের নিত্য যানজট ঠেলে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন শহরবাসী।
২০০১ সালে শহর এড়িয়ে জাতীয় সড়ক নিয়ে যাওয়ার জন্য আসানসোলের প্রবেশদ্বার কালিপাহাড়ি থেকে ঝাড়খণ্ডের মগমা পর্যন্ত জিটি রোডের ২৫ কিলোমিটার বাইপাস রাস্তা তৈরি করে মূল রাস্তার সঙ্গে মেলানো হয়। আসানসোল শহরের মধ্যে প্রধান রাস্তা পুরনো জি টি রোড। কিন্তু আসানসোল পুরসভার ৩০টি ওয়ার্ডের সঙ্গে বার্নপুর নোটিফায়েড ছ’টি পঞ্চায়েতে এলাকা যোগ করে পুরনিগম তৈরির পরে শহরে লোকজনের আনাগোনা বাড়ে। জি টি রোডের সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে শশীভূষণ গড়াই রাস্তার উপরেও।
এস বি গড়াই রোডে নিত্যদিনের দৃশ্য।— ফাইল চিত্র।
শহরে যানজট মাত্রাছাড়া হচ্ছে দেখে বছর কুড়ি আগে এডিডিএ - তত্কালীন বোর্ড আসানসোল শহরে একটি ষাট ফুট চওড়া রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করে। ঠিক হয়, বার্নপুর চিত্রা মোড় থেকে বিসি কলেজ, ইসমাইল হয়ে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত এই রাস্তা তৈরি করা হবে। সমীক্ষা করে এডিডিএ দেখেছিল, এই রাস্তা তৈরি হলে বার্নপুর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন আর আসানসোল বাজার দিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার হবে না।
এডিডিএ - একটি সূত্রে খবর, এই রাস্তার জন্য ইসমাইল থেকে মহিশীলায় জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। ২০০৯ সালে আসানসোল পুরসভায় তৃণমূল -কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মাথায় এডিডিএ অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেয়। স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ সেনগুপ্ত, মলয়াদ্রিশেখর বসুদের দাবি, এর জেরে রাস্তার দু’পাশের জমির দাম এক লাফে বেশ কিছুটা বেড়ে যায়। যোগাযোগের পরিকাঠামোয় বড় পরিবর্তন হতে চলেছে অনুমান করে জমি কিনে বাড়িও করতে শুরু করেন অনেকে। কিন্তু তার পরে হঠাত্ অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। রাস্তা তৈরির প্রকল্পটি থেকে পিছিয়ে আসে তত্কালীন এডিডিএ - বোর্ড।
এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, রাস্তাটি যে সব এলাকা দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল সেগুলি পুরসভার ১, ৪, ৯, ১৮, ১৯ ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শিবদাস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ওই রাস্তা তৈরি হলে আসানসোলের যানজট সমস্যা মিটত। শশীভূষণ গড়াই রাস্তায় দু’পাশে মোট ১৪টি স্কুল, একটি কলেজ, জেলা হাসপাতাল, আদালত -সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসকাছারি রয়েছে। স্কুল -অফিস চালু ছুটির সময়ে বেশ যানজট হয়। আদালতের কাছে দক্ষিণ -পূর্ব রেলের লেভেল ক্রসিং আছে। উড়ালপুল না হওয়ায় সেখানে নিত্যযাত্রীদের প্রাণান্তকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। ৬০ ফুটের রাস্তাটি তৈরি হলে তাই অনেক উপকার হত বলে মনে করছেন শিবদাসবাবু।
আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের বক্তব্য, “শশীভূষণ গড়াই রোডের বিকল্প রাস্তা খুবই জরুরি। এডিডিএ ৬০ ফুটের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আমরা চাই, বর্তমান বোর্ড সর্বদল বৈঠক ডেকে ওই রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা করুক।” কেন তখন পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসা হয়েছিল, এডিডিএ - তত্কালীন চেয়ারম্যান তথা আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর কাছে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে কালাঝরিয়া থেকে মহিশীলা হয়ে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত আর একটি রাস্তার পরিকল্পনা হয়। এডিডিএ - বোর্ডে ক্ষমতার হাতবদলের পরে নিয়ে কী পরিস্থিতি, আমার জানা নেই।” প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা আইএনটিইউসি - কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীরেন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে এডিডিএ - বোর্ডেও বদল হয়। তার পরেও বিকল্প রাস্তার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তাই যানজট সমস্যা মেটার তেমন কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না।” আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ তৃণমূলের অভিজিত্ঘটক অবশ্য বলেন, “এই রাস্তা খুব জরুরি। বার্নপুরের কালাঝরিয়া থেকে মহিশীলা হয়ে কালিপাহাড়ি পর্যন্ত বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনাও রয়েছে। নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে।” এডিডিএ - চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরো বিষয়টির সমীক্ষা চলছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.