এক দিকে কয়েক দশকের পুরনো সাংস্কৃতিক মেলা -কল্পতরু উত্সব। অন্য দিকে, সদ্য চালু হওয়া দুর্গাপুর মিষ্টি মেলা। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহান্তে দু’টি মেলাতেই ঢল নামল দুর্গাপুরে। এক মেলা থেকে অন্য মেলায় ছুটলেন শিল্পাঞ্চলবাসী
কল্পতরু উত্সব উপলক্ষে সাধুডাঙার কালিকানন্দ আশ্রমে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন পুজো ও মেলার আসর বসত। কিন্তু মেলায় জনসমাগম বাড়তে থাকায় মেলা সরানো হয় স্টেশন রোডের পাশে গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া ময়দানে। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ডিপিএলের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা এই মেলার নাম হয় ‘দুর্গাপুর সাংস্কৃতিক মেলা’। এর মধ্যে কৃষি, শিল্প, বইয়ের মেলা থেকে গৃহস্থালীর সামগ্রী, খাবারের দোকান, সবই থাকে। প্রতি সন্ধ্যায় থাকে অনুষ্ঠান। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে মেলা কমিটির সভাপতি হন ডিপিএলের আইএনটিটিইউসি নেতা দেবদাস মজুমদার। মেলার নামে ফিরে আসে ‘কল্পতরু’। তখন থেকে তা ‘দুর্গাপুর সাংস্কৃতিক মেলা -কল্পতরু উত্সব’ হিসেবে পরিচিত। |
|
|
গাঁধী মোড় মাঠে মিষ্টি মেলায়।
রবিবার বিকাশ মশান মশানের তোলা ছবি। |
গ্যামন ব্রিজ ময়দানে কল্পতরু উত্সবে ভিড়।
রবিবার বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি। |
|
এ বছর মেলার উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। বড় আকারে বসেছে কৃষি মেলা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪০ জন চাষি এসেছেন নিজের খেতের ফসল নিয়ে। ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা লাউ নিয়ে এসেছেন দেশবন্ধু কলোনির প্রশান্ত বারিক। আস্ত খৈনি গাছ নিয়ে মেলায় হাজির উইলিয়ম কেরি রোডের রামশারদ সিংহ। মূল মেলার পাশে বসেছে বইমেলা। রকমারি জিনিসের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে পিঠেপুলির দোকানও। বিভিন্ন শিল্প ও কর্পোরেট সংস্থারও স্টল রয়েছে। দুর্গাপুর শহর ছাড়াও বাইরে থেকে অনেকে আসছেন মেলায়। ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হচ্ছেন শ’তিনেক স্বেচ্ছাসেবক। বিকেলের পর থেকে স্টেশন রোড যানজটমুক্ত করতে হিমসিম পুলিশও। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে এই মেলায় সন্ধ্যায় শিশু ও মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে নাগরদোলা চড়ার ব্যবস্থা ছিল। সে জন্য ভিড় জমান অনেকে।
প্রতি সন্ধ্যায় রয়েছে অনুষ্ঠানের আয়োজন। রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক গান, কবিতা, বাউল, গীতি আলেখ্য, বাংলা ব্যান্ডের গান। থাকছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাও। রবিবার সন্ধ্যায় হল দেশের প্রথম সংশোধনাগারের আবাসিকদের লোকগানের দলের অনুষ্ঠান, ‘মুক্তবেড়ি’। বুধবার সলিল চৌধুরীর স্মরণে ‘শুধু তোমারই জন্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান হবে। মেলা কমিটির সভাপতি দেবদাসবাবু জানান, গত বার মেলার আয় থেকে ১ লক্ষ টাকা মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল এবং ১০ হাজার টাকা মেয়র তহবিলে দান করা হয়েছিল। এবার এই পরিমাণ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এবারের মেলার বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বলে জানান তিনি।
সিটি সেন্টারের গাঁধী মোড় মাঠে শনিবার থেকে দু’দিনের মিষ্টি মেলার আয়োজন করেছিল বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সহযোগিতায় পুরসভা। মোট স্টল ছিল ৩২টি। মেলার উদ্বোধন করেন মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। জেলা ও ভিন্ জেলা থেকে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন। কৃষ্ণনগর থেকে হাজির হয়েছিল সরপুরিয়া ও সরভাজা। সেই স্টলে দিনভর লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হলেও ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত এই সব মিষ্টি কিনেই বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। এ ছাড়া শক্তিগড়ের ল্যাংচা, কাটোয়ার পরানের পান্তুয়া, বাঁকুড়ার মেচার সন্দেশও বিক্রি হয়েছে দেদার। ছিল বিভিন্ন পিঠে -পুলির স্টলও। সকাল ১১টায় প্রবেশপথ খুলে দিতেই মেলা সরগরম হয়ে উঠেছে মিষ্টিপ্রেমীদের ভিড়ে। শহরে প্রথম বার খোলা মাঠে এমন একটি মিষ্টি উত্সব হওয়ায় খুশি সিটি সেন্টারের নন কোম্পনি এলাকার বাসিন্দা রজত চট্টরাজ। তিনি বলেন, “মনের সুখে মিষ্টি খাওয়ার এমন সুযোগ আগে কখনও পাইনি।” যাঁর মাথা থেকে এই মেলার ভাবনা, শহরের সেই কাউন্সিলর তথা মেয়রের স্ত্রী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুব ভাল সাড়া পেয়েছি।” উদ্যোক্তাদের তরফে পরিমল অগস্তি জানান, আগামী বছর মেলার দিন বাড়ানোর কথাও ভাবতে হবে তাঁদের। |