|
|
|
|
সভায় বেফাঁস মন্তব্য নয়, হুমায়ুনকে বার্তা তৃণমূলের
দিবাকর রায় • কলকাতা |
দলীয় মন্ত্রী ও দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সভায় মুখ খোলায় মুর্শিদাবাদ জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীরকে সতর্ক করলেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। শুধু হুমায়ুনই নন, যে সব নেতা সংযম হারানোয় দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদেরও লোকসভা নির্বাচনের আগে সংযত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল-অন্দরের খবর, দলীয় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলব না।” হুমায়ুন কবীরও মন্তব্য করতে চাননি।
গত শনিবার মুর্শিদাবাদের লালবাগের পাঁচরাহা মোড়ের প্রকাশ্য সভায় জেলার মন্ত্রী সুব্রত সাহা এবং দলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলির কড়া সমালোচনা করেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জেলার কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর। সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে নাড়াচাড়া হওয়ায় জেলার নেতা-কর্মীরা অস্বস্তিতে পড়েন।
দল সূত্রে খবর, তার পরেই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কথা বলা হয় মহম্মদ আলি এবং হুমায়ুনের সঙ্গে। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির তিন সদস্য মুকুল রায়, সুব্রত বক্সী এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন।
রাজ্য তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, হুমায়ুন খুব বেশি দিন দলে আসেননি। মন্ত্রী হওয়ার পরেও নিজের কেন্দ্র রেজিনগর থেকে জিততে পারেননি। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মুর্শিদাবাদ জেলায় শাসক দলের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে হুমায়ুন কবীর প্রকাশ্যে দলের মন্ত্রী এবং জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে বললে এবং তা বরদাস্ত করা হলে আখেরে দলের ক্ষতিই হবে। যদি কংগ্রেসের কোনও নেতার সঙ্গে মন্ত্রী বা জেলা সভাপতির যোগাযোগ নিয়ে তাঁর কাছে তথ্যপ্রমাণ সত্যিই থেকে থাকে, তবে দলীয় নেতৃত্বকে হুমায়ুন তা দিতে পারতেন। কিন্তু প্রকাশ্যে এ ভাবে সরব হলে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে এবং জনমানসে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে।
এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় সংগঠন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বেশ কিছু ব্লকে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন একাধিক নেতা-কর্মী। তা ছাড়া, জেলার এক বড় নেতার সঙ্গেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলেছে। এই পরিস্থিতিতে হুমায়ুন কবীরের ‘বেফাঁস’ মন্তব্যে দলের ভাবমূর্তি এবং ঐক্যের চেহারা ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা চান না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে ডেকে হুমায়ুনকে সতর্ক করা হয়েছে।
তবে হুমায়ুনের পক্ষেও রয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ।
তাঁদের মতে, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে হুমায়ুন যতটা সরব, বাকিরা ততটা নন। হুমায়ুনকে দলের কিছু নেতা প্রয়োজনীয় সাহায্য করছেন না। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্য সভায় এমন মন্তব্য করেছেন হুমায়ুন। খোদ হুমায়ুন অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন দলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি এবং মন্ত্রী সুব্রত সাহাও।
তৃণমূল অন্দরের খবর, রাজ্যের আরও কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে লোকসভা নির্বাচনের আগে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বা প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে সংযত হতে বলা হয়েছে। বীরভূমের এক জেলা নেতা সেই তালিকায় রয়েছেন।
উত্তর কলকাতার এক নেতাকেও সতর্ক করা হয়েছে।
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সংযম হারিয়ে ওঁরা সহজ পরিস্থিতিটাকে বেশি জটিল করে তুলছেন। ব্যাপারটা বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার সামিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দলনেত্রী চান না এমন কিছু হোক। তাই দলের তরফে এই সতর্ক-বার্তা দেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|