|
|
|
|
কেএলও দমনে এ বার বিশেষ পুলিশ বাহিনী
শিবাজী দে সরকার • কলকাতা |
প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল এক মাসেরও বেশি আগে। সেটা এত দিন পড়ে ছিল। কিন্তু জলপাইগুড়িতে ২৬ ডিসেম্বর আইইডি বিস্ফোরণে ছ’জনের প্রাণহানির পর জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)-কে দমনের উদ্দেশ্যে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী গঠনের ওই প্রস্তাব নিয়েই নাড়াচড়া শুরু হয়েছে নবান্নে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, কেএলও-র বাড়বাড়ন্ত রুখতে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী বা স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) গঠনের জন্য উত্তরবঙ্গের আইজি-র পাঠানো ওই প্রস্তাবে শীঘ্রই অনুমোদন দেওয়া হবে।
পুলিশি সূত্রের খবর, প্রস্তাব অনুযায়ী জনা ৩০ অফিসার-কর্মী নিয়ে গড়া এসওজি কাজ করবে এসপি পদমর্যাদার এক জন আইপিএসের নেতৃত্বে। আপাতত কেএলও প্রভাবিত বলে চিহ্নিত জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ, দার্জিলিং জেলা এবং শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট থেকে বাছাই করা অফিসার-কর্মীদের নিয়ে হবে বাহিনী, যার কাজ হবে শুধু কেএলও-র খবর জোগাড় ও সেই অনুযায়ী অভিযানে নামা। ভিন রাজ্যের, বিশেষ করে অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলির পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় রেখেও এসওজি কাজ করবে।
জলপাইগুড়ির বিস্ফোরণ ও মালদহে বাসে গুলি চলার পরিপ্রেক্ষিতে কেএলও দমনে কী করণীয়, সেই বিষয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় কাল, সোমবার উত্তরবঙ্গের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং করবেন বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “শুধু বিস্ফোরণ বা বাসে গুলি চলার ঘটনা নয়, সম্প্রতি কেএলও-র কাজ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে জেলা পুলিশের পক্ষে দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও খুন-চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ দমনের কাজ সামলে কেএলও-র ব্যাপারে খবর রাখা এবং উত্তরবঙ্গে ও ভিন রাজ্যে গিয়ে কেএলও-র বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সমস্যার। সব মিলিয়ে কেএলও দমনের জন্য উত্তরবঙ্গের আইজি-র অধীনে বিশেষ বাহিনী হওয়া প্রয়োজন।”
জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণের আগে ২০১৩-র বিভিন্ন সময়ে কেএলও সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় জনা ২৫-কে ধরা হয়। ধৃতদের মধ্যে মালদহ, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, অসমের বাসিন্দা রয়েছে। বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে অসম পুলিশের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত ছিল, কেএলও দমনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের সঙ্গে ঠিকঠাক সমন্বয় রক্ষা করছে না।
পশ্চিমবঙ্গের এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “২০১৩-র মার্চে গঠিত হওয়া কেএলও-র কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগই অসমের বাসিন্দা। মায়ানমারে প্রশিক্ষণ নেওয়া কেএলও-র নতুন সদস্যদের প্রায় ৮০% অসমের লোক। আবার আলফা ছাড়াও ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কেএলও সাহায্য পাচ্ছে মণিপুর, নাগাল্যান্ডের কিছু জঙ্গি সংগঠনের থেকে। তাই ও সব রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা ও গোয়েন্দা-তথ্য আদান-প্রদান জরুরি। জেলা পুলিশের পক্ষে যেটা অসম্ভব।”
ওই অফিসারের বক্তব্য, “সাম্প্রতিক কালে কেএলও সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার তদন্তে যুক্ত ও ভাল কাজ করেছেন যে সব পুলিশ অফিসার-কর্মী, মূলত তাঁদেরই নেওয়া হবে এসওজি-তে। একেক জন একেকটি জেলায় কাজ করলে যোগাযোগ-সমন্বয়ের যে সমস্যা হয়, এসওজি-তে সেটা হবে না। তাঁরা একই ছাতার তলায় পুরোদস্তুর ইউনিট হিসেবে কাজ করতে পারবেন।” তদন্ত, অভিযানের ক্ষেত্রে কোনও জেলা পুলিশের সাহায্য এসওজি পাবে। এই ব্যাপারে এসওজি-র এসপি উত্তরবঙ্গের কেএলও প্রভাবিত জেলাগুলির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করবেন।
আপাতত চারটি জেলার পুলিশ ও শিলিগুড়ি কমিশনারেট থেকে বাছাই করা ওই অফিসার-কর্মীদের এসওজি-তে ডেপুটেশনে পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ওই এসওজি-তে আনা হতে পারে এমন কিছু অফিসারকে, যাঁরা ১০-১২ বছর আগে কেএলও-তৎপরতার প্রথম পর্যায়ে কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে ওই জঙ্গি কাজ দমনে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন।
এসওজি তৈরির অনুমোদন সরকারি ভাবে আসার আগেই এই ব্যাপারে নবান্ন থেকে সবুজ সঙ্কেত মিলবে বলে ইঙ্গিত পেয়ে ওই অফিসার ও কর্মীরা একটি ইউনিট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। উত্তরবঙ্গের কেএলও-প্রভাবিত এলাকাগুলিতে গিয়ে গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির পুলিশের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসওজি-র দু’টি বিভাগ থাকবে। একটি বিভাগ গোয়েন্দা-তথ্য সংগ্রহ করবে এবং অন্য বিভাগ সরাসরি ‘অপারেশনে’ নামবে। পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী প্রভাবিত জঙ্গলমহলে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে তৈরি হয়েছে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স (সিআইএফ)। ছ’শোরও বেশি সদস্যের ওই বাহিনীর একটি বিভাগ অপারেশন, আর একটি বিভাগ তথ্য সংগ্রহ এবং তৃতীয় বিভাগটি প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। সেই তুলনায় কেএলও দমনের জন্য প্রস্তাবিত এসওজি কলেবরে অনেকটাই ছোট।
|
শহিদ দিবস |
বজরাপাড়া বিস্ফোরণের দিনটিকে (২৬ ডিসেম্বর) ফি-বছর জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করবে তৃণমূল। শনিবার জলপাইগুড়িতে দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এ কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তা ছাড়াও, কেএলও এবং তাদের সহযোগীদের জনবিচ্ছিন্ন করতে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি এলাকায় সভা ও মিছিল হবে বলে তিনি জানান।
|
তদন্তে সিআইডি |
জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের বিস্ফোরণের তদন্তভার নিজেদের হাতে নিচ্ছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে সিআইডি-র গোয়েন্দাদের একটি দল তদন্তের জন্য শিলিগুড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের হাতে বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া তিন কেএলও জঙ্গিকে নিজেদের হেফাজতে নেবে সিআইডি। |
|
|
|
|
|