দিল্লির যে মহিলা চিকিৎসক সুপ্রিম কোর্টে ইন্টার্ন-কাণ্ড নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছেন, অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে চেনেনই না বলে জানালেন শনিবার। তাঁর বক্তব্য, এই মামলা তাঁর অস্বস্তিই বাড়িয়েছে। শুক্রবার দায়ের হওয়া ওই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, বিতর্কিত ডার্বি ম্যাচ নিয়ে মোহনবাগান ক্লাবের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার বদলা নিতেই প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গঙ্গোপাধ্যায়কে ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হয়। এবং সেই ষড়যন্ত্রের সূত্রেই প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এম পদ্মানারায়ণ সিংহ নামে দিল্লির এক মহিলা ওই মামলা দায়ের করার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এতে সাময়িক স্বস্তি পাবেন। প্রাক্তন বিচারপতি কিন্তু জানিয়েছেন, ব্যাপারটা তাঁর অস্বস্তিই বাড়িয়েছে। প্রাক্তন বিচারপতির বক্তব্য, মামলা দায়ের করার আগে বা পরে কেউ তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি। পদ্মানারায়ণ নামে কারও সঙ্গে তাঁর আলাপ নেই। ওই মহিলার পরিবারের কাউকেও তিনি চেনেন না। হঠাৎ করে এমন মামলা দায়ের হওয়ায় বিস্ময়ও গোপন রাখেননি প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁর কথায়, “কাগজে পড়লাম। এতে আমি মোটেই খুশি বা নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। কে, কেন, কী করছে সব সময় বোঝা যায় না। ওই নামের কাউকে বা তাঁর কোনও আত্মীয়কে চিনি না। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করলেও তা যে পরে খারিজ হয়ে যাবে না, তারও তো নিশ্চয়তা নেই।”
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি না, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পর দিনই পদ্মানারায়ণ প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে নেওয়া যাবতীয় ব্যবস্থার নিন্দা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগে মোহনবাগান ক্লাবের নাম জড়ানোয় বিভিন্ন মহলে আলোড়ন তৈরি হয়।
জনস্বার্থ মামলায় পদ্মানারায়ণ জানিয়েছেন, কলঙ্কিত ডার্বি ম্যাচে দল তুলে নেওয়ার জন্য মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। ফেডারেশন এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ে তার দায়িত্ব দেয় অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। পদ্মানারায়ণের অভিযোগ, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্যই অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করা হয়। এবং মোহনবাগানের তরফেই ছক কষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস-এর এক মহিলা ইন্টার্নকে রায়ের রিপোর্ট অনুলিখনের জন্য তাঁর কাছে পাঠানো হয়। ওই ইন্টার্নই পরে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন।
মোহনবাগানের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা কোনও ইন্টার্নকে রিপোর্ট লেখার জন্য অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে পাঠায়নি। তিনি নিজেই ওই ইন্টার্নকে ডেকেছিলেন। সে দিনের সভায় মোহনবাগানের প্রতিনিধিদলে থাকা অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, “শুনানি শেষে আমরা জানতে চাই, রায় কবে জানানো হবে। ফেডারেশন থেকে প্রাক্তন বিচারপতিকে এক জন স্টেনো-টাইপিস্ট নেওয়ার কথা বলা হয়। তিনি তখন জানান, রিপোর্ট লিখতে একটু দেরি হবে। তিনিই এক জন ইন্টার্নকে সন্ধে নাগাদ ডেকে পাঠাবেন রিপোর্ট লিখতে। আমাদের তাড়া ছিল। রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা না-করে আমরা বিমানে ফিরে আসি।”
গোটা বিষয়টি নিয়ে শনিবার অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁর মন্তব্য ছিল, “আমি এ ব্যাপারে কিচ্ছু জানি না।” তবে তাঁর রায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যাওয়ায় যে একটা মনোমালিন্য হয়েছিল, সে কথা তিনি মেনেছেন। বলেছেন, “ওরা বলেছিল, মাঠে যা পরিস্থিতি হয়েছিল তাতে খেলা চালু করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমি সব খতিয়ে দেখে বলি, এমন কিছু খারাপ পরিস্থিতি ছিল না যাতে খেলা বাতিল করতে হয়। এতে মোহনবাগান অসন্তুষ্ট হয়েছিল।” |