উত্তরপ্রদেশের সাহসপুর থেকে ভারতীয় দলের তারকা পেসার হয়ে ওঠার রূপকথার নায়ক মহম্মদ শামি।
এ বার তেমনই আর একটা রূপকথা লেখার স্বপ্ন দেখছেন বারাণসী থেকে কলকাতা ময়দানে এসে পড়া আমির গনিও।
যে কাহিনি সবে প্রথম অধ্যায়ে। অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে উঠেছে। শনিবার শারজায় পাকিস্তানকে ৪০ রানে হারিয়ে এশিয়া-সেরার খেতাব জেতা ভারতের সাফল্যে ভাল রকম অবদানও রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ দু’টি উইকেট ও একটি ক্যাচ নিয়ে। এ বার গনির লক্ষ্য পরের অধ্যায়গুলো।
শনিবার যখন ফোনে ধরা গেল, শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের ঘাড়ে ৩১৪ রান চাপিয়ে তাদের ২৭৪-এ আটকে দিয়ে ম্যাচ ও ট্রফি জিতে তখন সদ্য হলিডে ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে নিজের ঘরে ঢুকেছেন গনি। ফোনে বলছিলেন, “এ বছরই আমাদের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ আছে। সেই দলে সুযোগ পেলে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। রঞ্জি ট্রফির সিনিয়র টিমেও বাংলার হয়ে খেলতে চাই। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। সফল হলে নিশ্চয়ই ভারতের সিনিয়র দলেও ডাক পাব। আমার সামনে এখন অনেকটা পথ, অনেকগুলো ধাপ। সে সব পেরোতে পারলে তবেই তো শামিভাইয়ের মতো হতে পারব।”
ভারতের ৩১৪-র ইনিংসে এ শহরের ক্রিকেটের এক প্রাক্তনের অবদানও প্রচুর। তিনি এ দিনের সেঞ্চুরির নায়ক সঞ্জু স্যামসন (৮৭ বলে ১০০)। যিনি দু’বছর আগে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে ছিলেন। তাঁর ঘরে ফোন বাজতে রুমমেট অখিল হরওয়াদকর বললেন, “ছেলেটা এত ছটফটে যে, ঘরে থাকার সময়ই পায় না। দেখুন, বোধহয় জিমে গিয়ে হালকা কিছু ওয়ার্ক আউট করছে। তবে আমাকে এক দিন বলছিল, আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা ওর অনেক কাজে লেগেছে।” নাইটদের দলে থাকলেও সুযোগ না পাওয়ার পর গত মরসুমে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে নজর কাড়েন সঞ্জু। |
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ভারত হেরেছিল চার দিন আগেই। “শনিবার ফাইনালে ওদের হারিয়ে সেই হারেরই বদলা নিলাম আমরা,” বলছিলেন গনি। তবে সেই বদলার আবহে ভারত-পাক ক্রিকেটের চেনা উত্তেজনার চোরা স্রোতটা ছিল না। বললেন, “তেমন কিছুই হয়নি। বরং ওদের কয়েক জন প্লেয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্বই হয়েছে আমার।”
মহম্মদ শামির প্রতিভাকে সারা দেশের সামনে মেলে ধরে যেমন তাঁর ‘লঞ্চপ্যাড’ হয়ে উঠেছিল কলকাতা, গনির ক্ষেত্রে তেমনই ভূমিকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহরের। শারজা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আসা প্রচুর ভারতীয় সমর্থকের অভিনন্দন পেয়ে, ড্রেসিংরুমে প্রচুর হইহুল্লোড় করার পর বাংলার ১৭ বছরের অফ স্পিনার যখন ফোনে বলছিলেন, “কলকাতায় খেলতে না এলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম, বলুন?” তখন তাঁর কণ্ঠে ময়দানের পরিচিত আবেগ ও কলকাতার ক্রিকেটের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্পষ্ট।
এই সাফল্যের মধ্যেও ভোলেননি মহমেডান স্পোর্টিংয়ের প্রয়াত কর্তা মুনব্বর আলিকে, যিনি গনির মধ্যে ভবিষ্যতের এক প্রতিশ্রুতিমান অফস্পিনারকে আবিষ্কার করে আট বছর আগেই নিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়। ক্রিকেট দুনিয়ার আলোর সন্ধান দিতে। বলছিলেন, “মুনব্বর স্যর আজ বেঁচে থাকলে আমার বাবা-মায়ের চেয়েও বেশি খুশি হতেন বোধহয়। তবে উনি চলে যাওয়ার পরও কলকাতায় যা ভালবাসা, যত্ন পেয়েছি, তা ভুলব না। বিশেষ করে (বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ কোচ) গৌতম সোম স্যর, (শ্যামবাজার ক্লাবের অন্যতম প্রধান কর্তা) গৌতম দাশগুপ্ত স্যর, রাজীব দত্তর কাছে আমার প্রচুর ঋণ। সিএবি-র কাছেও যথেষ্ট কৃতজ্ঞ আমি।”
দশ দিন পর থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিবির। কোচ ভরত অরুণ তাঁকে শিবিরে অবশ্যই যোগ দিতে বলে দিয়েছেন বলে জানালেন গনি। তাঁর পরের ‘অ্যাসাইনেমন্ট’ এখন এটাই। বললেন, “ওখানে গিয়ে নিজেকে আরও ধারালো করে তুলতে হবে। এটাই হবে আমার কাজ। তার পর বিশ্বকাপে বড় লড়াই।”
যেখানে এশিয়া কাপ জিতলেন, বিশ্বকাপও সেই আমিরশাহিতেই। এক রকম বিশ্বকাপেরই মহড়া সেরে নিলেন ওখানে। গনি এ বার আসল লড়াইয়ের অপেক্ষায়। |
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ৩১৪-৮ (বিজয় ১০০, সঞ্জু ১০০)
পাকিস্তান ২৭৪-৯ (কামরান ১০২ ন.আ., কুলদীপ ৩-৭২, গনি ২-৩৯) |
পুরনো খবর: ফাইনালে ভারত-পাক |