|
|
|
|
যৌন হেনস্থার নালিশ, বিপাকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা-কর্তা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৪ জানুয়ারি |
মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে গোটা দেশ। ঠিক তখনই একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তার বিরুদ্ধে মহিলা আধিকারিককে যৌন হয়রানি ও তা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর, তা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে মনমোহন সরকারের অন্দরমহলে, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের মধ্যে। এমনকী প্রাথমিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি বলে রায় দেওয়া বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকা আর এক মহিলা আধিকারিকের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধাও আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগে প্রকাশ, ঘটনাটি ঘটেছে সদ্য রুগ্ণ সংস্থার তকমা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্রিজ অ্যান্ড রুফ-এ। অভিযোগের তির বর্তমানে সংস্থার কলকাতা সদর দফতরে কার্যনির্বাহী সিএমডি-র দায়িত্বে থাকা মহেন্দ্র কুমার সিংহের দিকে। ভারী শিল্প মন্ত্রক তাঁকেই সম্প্রতি সিএমডি-র দায়িত্ব দিয়ে শীর্ষ পদে বসানোর সুপারিশ করেছিল। শেষ বেলায় এতে বাদ সাধে কর্মী সংক্রান্ত মন্ত্রক। এই মন্ত্রকের তরফে ভারী শিল্প মন্ত্রককে মহেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। এ দিকে সিংহের দাবি, “সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন। এগুলো আসলে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। বানানো অভিযোগ দিয়ে মামলা করা হয়েছে। আমি ওই সব মামলা খারিজ করার জন্য পাল্টা মামলা করেছি।” তাঁর আরও দাবি, তিনি সংস্থাকে লাভজনক করে তোলার চেষ্টা করছেন।
গত সেপ্টেম্বরে সিংহকে কার্যনির্বাহী সিএমডি করা হয়। তার আগে তিনি সংস্থার ডিরেক্টর (প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট) ছিলেন। সে সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংস্থার আর এক আধিকারিক লিন্ডা অ্যালেনের নেতৃত্বে গড়া বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রাথমিক ভাবে সিংহকে দোষী বলে রায় দেয়। তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরেই অবসর নেন লিন্ডা। কিন্তু তাঁর অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা আটকে যায় বলে অভিযোগ। কলকাতার পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা লিন্ডার অভিযোগ, “প্রতিহিংসার বশেই অফিসের ফাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা আটকে দিয়েছেন সিংহ। তিনি আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে না-পারেন।”
এ নিয়ে মামলা করার পাশাপাশি লিন্ডা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সনিয়া গাঁধীর কাছেও অভিযোগ জানান। সংস্থার অফিসার সংগঠন অভিযোগ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে, যার পর ক্যাবিনেট সচিবালয়ও নড়েচড়ে বসেছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান মমতা শর্মা নিজে ভারী শিল্পমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেলকে চিঠি লিখেছেন। কর্মী সংক্রান্ত মন্ত্রকে প্রশ্ন উঠেছে, যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তাঁকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শীর্ষপদে বসানোর জন্য কেন উঠেপড়ে লেগেছিল ভারী শিল্প মন্ত্রক? সিংহের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির পাশাপাশি নতুন চালু হওয়া কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনেও মামলা ঝুলছে। দিল্লি হাইকোর্টে রয়েছে জনস্বার্থ মামলা। আদালত তাঁকে সমন পাঠিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই নিয়োগ এবং পদোন্নতির সময়ে তথ্য লুকিয়েছিলেন তিনি। এর পরেও কী ভাবে সিংহের নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রিসভার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠানো হচ্ছিল?
এ দিকে, কলকাতায় ব্রিজ অ্যান্ড রুফ-এর সদর দফতর সূত্রের অভিযোগ, মহেন্দ্র সিংহ অস্থায়ী ভাবে শীর্ষপদে আসার পর থেকেই সংস্থায় সমস্যা শুরু। দেড়শো কোটি টাকা মূল্যের আমদাবাদ মেট্রো ও দিল্লি পুলিশের দু’টি বরাত হাতছাড়া হয়েছে। কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ও পরিষেবা কর জমা দেওয়াও বন্ধ। |
|
|
|
|
|