বন্দিদের জন্য স্বস্তির হাওয়া লালবাজারের লক-আপে
জেল থেকে সংশোধনাগার বদল হয়েছে বহু দিনই। এ বার পরিবর্তন হচ্ছে পুলিশ লক-আপেও। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের কর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গরমে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে হাওয়া চলাচলের জন্য বসানো হবে বিশেষ যন্ত্র। তাতে কিছুটা স্বস্তি পাবেন অভিযুক্ত বন্দিরা। মার্চ থেকেই এই যন্ত্র কাজ শুরু করবে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
এক সময়ে ধারণা ছিল, জেল মানেই তীব্র কষ্টের মধ্যে দিনযাপন। কিন্তু নয়ের দশকের শেষ দিক থেকে এই ভাবনায় বদল আনা হয়। বন্দিদের নিয়ে গান-নাটকের মতো অনুষ্ঠানও চালু হয়। এ ধরনের প্রকল্প থেকেই নাইজেল আকারার মতো অভিনেতাকে পেয়েছে টলিউড। কিন্তু লক-আপের চেহারায় এত দিন পর্যন্ত কোনও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি।
পুলিশকর্তাদের দাবি, আগেও শহরের নাগরিকদের জন্য নানা মানবিক প্রকল্প চালু করেছেন তাঁরা। সেই সূত্র ধরেই এ বার অভিযুক্তদের জন্য মানবিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই যন্ত্র বসাতে খরচ পড়বে কয়েক লক্ষ টাকা। নতুন হাওয়া-যন্ত্র বসবে লক-আপের বাইরে। পাইপ দিয়ে তা লক-আপের কুঠুরিতে হাওয়া ছড়িয়ে দেবে। এতে কমবে তাপমাত্রাও।
বস্তুত, গরমে লালবাজারের লক-আপের পরিস্থিতি নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। ২০১২ সালের মে মাসে বিক্ষোভ-মিছিল থেকে গ্রেফতার করা হয় কয়েক জন বিজেপি সমর্থককে। পরে অভিযোগ ওঠে, লালবাজারের লক-আপে অসহ্য গরমে অসুস্থ হয়ে তাঁদের এক জনের মৃত্যু হয়। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ স্বীকার করেনি। তবে গরমে লক-আপে যে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ দেখেছে, এপ্রিল-মে-জুন মাসে তীব্র গরম পড়ছে শহরে। হচ্ছে তাপপ্রবাহও। লাগাতার ওই পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে থাকতে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অভিযুক্তেরা। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “এখনও বড় বিপত্তি ঘটেনি। কিন্ত যে কোনও সময়েই ঘটতে পারে।”
কেমন পরিস্থিতি হয় গরমে?
পুলিশ জানায়, বর্তমানে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে সাত-আটটি কুঠুরি রয়েছে। সব ক’টি কুঠুরি মিলিয়ে ১২০ জন বন্দি থাকতে পারেন। প্রতি কুঠুরিতে হাওয়া পৌঁছয় দু’টি করে স্ট্যান্ড ফ্যান দিয়ে। সেন্ট্রাল লক-আপে সাধারণত গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়া অভিযুক্তেরাই থাকেন না, শহরের থানাগুলিতে মহিলা লক-আপ না থাকায় মহিলা অপরাধীদেরও সেন্ট্রাল লক-আপে রাখা হয়। সঙ্গে জুড়ে যায় মিছিল, আইন অমান্য কর্মসূচি থেকে গ্রেফতার করা লোকজনও। এই ধরনের কর্মসূচি থেকে গ্রেফতার হওয়ার পরে ১২০ জনের জায়গাতেই দেড়শোরও বেশি লোককে রাখা হয় বলে লালবাজার সূত্রে খবর। পুলিশ জানায়, গরমে বন্দি কম থাকলেও লক-আপে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। আর সংখ্যা বাড়লে রীতিমতো হাঁসফাঁস করতে থাকেন বন্দিরা।
পাশাপাশি, সমাজের উঁচু স্তরের অভিযুক্তদের রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়েছে লালবাজার। গত দু’বছরে একের পর এক ‘হাই-প্রোফাইল’ অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন আমরি-কর্তা, শম্ভুনাথ কাওয়ের মতো নেতা কিংবা কুণাল ঘোষের মতো সাংসদ। পুলিশকর্তাদের একাংশের মত, এ ধরনের মানুষজন সাধারণ চোর-ডাকাতদের মতো কষ্ট সহ্য করে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত নন। ফলে লক-আপে অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্যায় পড়ে যাবেন শীর্ষ কর্তারা।
এই সূত্র টেনেই কলকাতা পুলিশ বলছে, নতুন যন্ত্র বসলে লক-আপের ভিতরে পরিস্থিতি অনেক ভাল হবে। বন্দি অবস্থাতেও যেমন স্বস্তি পাবেন অভিযুক্তেরা, তেমনই এখনকার তুলনায় আরও বেশি বন্দি রাখা যাবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.