বাসে পুলিশ পৌঁছে দেবে শিক্ষকদের
সার দিয়ে বাসে উঠবেন শঙ্কিত ভোটকর্মীরা। পোজিশন নেবে পুলিশ। চার পাশে সতর্ক নজর রেখে বাস ছাড়বে ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশে। না জানি কী আছে কপালে! কেউ হয়তো ইষ্টনাম নেবেন, ভালয় ভালয় কাজ মিটিয়ে ফিরে আসার আশায়। প্রশাসন অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে, এ ভাবে কড়া পাহারায় ফিরিয়েও আনা হবে সবাইকে।
কিন্ত উদ্বেগ তাতে ঘুচছে কী?
সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় দেশের বা পঞ্চায়তের ভাগ্য নির্ধারণ নয়। কলেজ পড়ুয়ারা তাঁদের ভালমন্দ দেখার জন্য নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন। তারই নির্বাচনে কলেজ শিক্ষকদের জন্য এমন ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। খাস কলকাতায় অশান্তি মাত্রা ছাড়াচ্ছে দেখেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে ছাত্র সংসদের ভোট বন্ধ রেখেছিল রাজ্য। অনলাইনে এই ভোট হলে অবাঞ্ছিত ঘটনা কমতে পারে, তা অনেকেই মানছেন। কিন্তু বিধির বাঁধন, পরিকাঠামোর সমস্যা, নানা মহলের অনীহা ও রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার তাগিদ এই সব বাধা কাটিয়ে ভোট-হাঙ্গামার অচলায়তন ভাঙা যায়নি এত দিনেও। ফের শুরু হয়েছে ভোট প্রক্রিয়া। এবং অশান্তিও। পরিবর্তন বলতে, শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশি ঘেরাটোপ!
ছাত্রভোটের মনোনয়ন জমা নেবেন যে শিক্ষকরা, পুলিশি প্রহরায় তাঁদের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পৃথক বাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ওই শিক্ষকদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছিল। শুক্রবার কুটা-র প্রতিনিধিরা পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের জন্য বাসের বন্দোবস্ত করা হবে। শনিবার এ কথা জানিয়েছন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। খুশি কুটা।
আগামী মঙ্গলবার ৫২টি বিভাগের প্রধান ও তাঁদের সহকর্মীদের সামনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শনিবার উপাচার্য বলেন, “রাজাবাজার, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ও কাঁটাকল ক্যাম্পাসে ৪টি বাস থাকবে। সকাল ১০টায় পুলিশি পাহারায় বাসগুলি রওনা হবে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের উদ্দেশে।” কাল, সোমবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং হস্টেলগুলিতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান উপাচার্য।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রার্থীরাই শুধু মনোনয়নপত্র জমা দিতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন। ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন কলেজে স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সিসিটিভি থাকবে। পরিচয়পত্র দেখে, তল্লাশি করেই ঢুকতে দেওয়া হবে। এই ভোটে অনলাইনে তোলা গিয়েছে মনোনয়নপত্র। পরিকাঠামোর সমস্যায় সে ভাবে জমা নেওয়া যাচ্ছে না, জানিয়েছেন উপাচার্য।
এসএফআই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন শিয়ালদহ থেকে মিছিল করে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস পর্যন্ত যাবে। তাদের বক্তব্য, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) বিরোধী সংগঠনগুলির ভোটে দাঁড়ানো ঠেকাতে সন্ত্রাস করছে। প্রতিবাদেই মিছিল।
ছাত্র সংসদ ভোট নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দিন ঠিক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবু কলেজে কলেজে গোলামাল চলছে। শুক্রবার হরিমোহন ঘোষ কলেজের পরে শনিবার বিদ্যাসাগর কলেজ ফর উইমেনে মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে ঝামেলা হয়। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তাদের মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দেয় টিএমসিপি। ৩টি মনোনয়নপত্র ছোঁড়া হয়। টিএমসিপি অভিযোগ মানেনি। পুরুলিয়ার জে কে কলেজেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে টিএমসিপি-এসএফআই সংঘর্ষ হয়। ৮ জন জখম হয়েছেন।
অনলাইনে ভোট নিয়ে এই ধরনের অশান্তি এড়ানো হল না কেন? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর জবাব, “সরকার প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্বাচনের জন্য পৃথক কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। তাতে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের কিছু বলার নেই। কিন্তু যেখানে গোলমাল হচ্ছে, সেখানেই তো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
অনলাইন প্রক্রিয়া চালু করতে কলেজ কর্তৃপক্ষও তেমন উদ্যোগী হন না বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সিংহভাগ কলেজের পরিচালন সমিতিই ক্ষমতাসীন দল প্রভাবিত। তারা চায়, ছাত্র সংসদের দখল নিক তাদের দলের ছাত্র সংগঠন। আবার মনোনয়নপত্র তুলতেই না পারলে ভোটের আগেই হেরে যেতে হয়। তাই বিরোধীরাও নাছোড়। ফলে হিংসা-হানাহানি ঘটনা ঘটেই চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন কলেজগুলিকে অনলাইনে ভোট করার পরামর্শ দিল না? সুরঞ্জনবাবু জানান, কলেজে নির্বাচন হয় তাদের নিজস্ব বিধি মেনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বলার নেই। অধ্যক্ষ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী জানান, কোনও কলেজের বিধিতেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার সংস্থান নেই। বিধি পাল্টানোর প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। আগামী বছর তাঁরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.