এ বার তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্যও এক- জানলা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার সল্টলেকের ওয়েবেল ভবনে বৈঠক করেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন টিসিএস, উইপ্রো, আইবিএম, কগনিজ্যান্টের মতো মোট ৬০টি সংস্থার কর্তারা, দফতরের সচিব সতীশ তিওয়ারি, ওয়েবেলের এমডি পি কে দাস এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সংগঠন ন্যাসকমের প্রতিনিধিরাও। সেখানেই শিল্প ক্ষেত্রের ধাঁচে তথ্যপ্রযুক্তির জন্য একজানলা ব্যবস্থা চালুর ভাবনা-চিন্তার কথা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
এ দিনের বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি নিজেদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরেছে। যার অন্যতম শিল্প স্থাপনের অনুমতি পেতে দফতরে দফতরে ঘোরার বিষয়টি। যেমন, এখন সল্টলেকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গড়তে চাইলে নবদিগন্ত-সহ পূর্ত-জল-বিদ্যুতের মতো বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে হয়। কিন্তু একজানলা ব্যবস্থা থাকলে, এক জায়গা থেকেই সংস্থাগুলি শিল্প তৈরির জন্য আবেদন জানাতে পারবে। এই ব্যবস্থায় এক জন নোডাল অফিসার থাকবেন, যিনি পুরো বিষয়টি পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি, শিল্পের আদলে এ ক্ষেত্রেও একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়ার জন্য যাতে কোনও সংস্থাকে বিভিন্ন দফতরের দরজায় দরজায় অনুমতির জন্য ঘুরতে না-হয়, সে জন্য আগেই একজানলা ব্যবস্থা চালু করেছে রাজ্য সরকার। সেখানেই সংস্থা শিল্প গড়তে নিজেদের আবেদনপত্র জমা দিতে পারে। যার পাতার সংখ্যা ধাপে ধাপে সাতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ বার তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্ষেত্রে সে রকমই ব্যবস্থা চালু করতে চান তারা।
আড়াই বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি টানতে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে শিল্পমহলের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও জেলায় লগ্নি টানার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
পার্থবাবু জানান, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্প্রসারণের জন্য ইতিমধ্যেই ১৩টি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে সম্প্রসারণ ছাড়াও নতুন পার্ক তৈরি হবে বড়জোড়া, বোলপুর, কল্যাণী, খড়্গপুর, পুরুলিয়া-সহ জেলার বিভিন্ন শহরে। শুধুমাত্র সফটওয়্যার শিল্পই নয়, হার্ডওয়্যারে লগ্নি টানতেও আগ্রহী তাঁরা। শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরের তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক দু’টি পুরদস্তুর কাজ শুরু করেছে বলেও এর আগে জানিয়েছেন তিনি। এই হাব তৈরির পাশাপাশি, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে উন্নত পরিকাঠামো দিতেও যে রাজ্য বদ্ধপরিকর, সে কথাও বহুবারই বলেছেন মন্ত্রী।
সম্প্রতি বানতলায় তথ্যপ্রযুক্তি ও চর্মশিল্পের বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্য নবদিগন্তের ধাঁচে টাউনশিপ অথরিটি বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ গড়ার কথাও জানানো হয়েছে। তাই শনিবারের এই একজানলা ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নি টানার নতুন প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে। |