মালদহ জেলায় পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে জেলার দুই মন্ত্রীর মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এক পক্ষের বক্তব্য, পুলিশ দলীয় কর্মীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টে অভিযোগকারীদের হেনস্থা করছে। এই অবস্থা চলতে থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দলের একাংশ দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। আর এক পক্ষের দাবি, পুলিশ ঠিক কাজই করছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান লাগাতার চালিয়ে যাওয়া উচিত। প্রথম পক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। আর দ্বিতীয় দলের মতের সঙ্গে একমত জেলার আর এক বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী।
দলীয় সূত্রের খবর, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র। সুজাপুর, মোজামপুর ও নওদা যদুপুর গ্রামপঞ্চায়েতের সাবিত্রীদেবীর অনুগামী ৪৯ জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, ৬ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার তৃণমূলের ওই ৫৫ জন সদস্য জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে জেলা সভানেত্রীকে অভিযোগও জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাতে কলকাতায় গিয়েছেন।
দলের নির্বাচিত সদস্যের অসন্তোষের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সাবিত্রী দেবী। তিনি বলেন, “কালিয়াচকের তিনটি অঞ্চলে দলের নির্বাচিত সদস্যদের তোলা অভিযোগ সত্যি। যারা এলাকায় সন্ত্রাস করছে, তাদের পুলিশ গ্রেফতার করছে না। উল্টে যাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করছে।” তিনি জানান, বিষয়টি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।
কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী অবশ্য পুলিশের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “কেউ যদি খুন খারাপি করে, বাড়িতে আগুন লাগায়, ধর্ষণ করে, তাহলে কী পুলিশ চুপচাপ বসে থাকবে? অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত করে পুলিশ যাঁর নাম পাবে, তাঁর বিরুদ্ধেই তো ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ ঠিক কাজই করছে। দলে আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুগামী। যিনি দলে থাকবেন, তাঁকে দলের নিয়ম, আইনের শাসন মানতে হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জানুয়ারি সকালে কালিয়াচক থানার পুলিশ একাধিক খুনের অভিযোগে ফেরার অভিযুক্ত পোলা শেখকে মোজমপুর থেকে গ্রেফতার করে। ফেরার পথে স্থানীয় বাসিন্দার পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে পুলিশকে মারধর করে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। পুলিশের তিন অফিসারকে মারধর করার অভিযোগে পুলিশ তৃণমূল নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। ২ জানুয়ারি সকালে দারিয়াপুরে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল শেখের ভাই বারেক শেখকে না পেয়ে একদল উত্তেজিত গ্রামবাসী বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র এবং গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আসাদুল শেখের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নওদা যদুপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বকুল শেখের বিরুদ্ধে মামলা করে। জেলা পুলিশের দাবি, প্রতিটি ঘটনায় তদন্তে যে নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ দলের একাংশ নেতা-কর্মী পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই নানা অভিযোগ তুলছেন। |