রংপুর কারমাইকেল কলেজ বাড়ির নকশা তৈরি হয়েছিল জলপাইগুড়ির পূর্ত বিভাগের অফিসে বসেই। সেখানেই ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররা ঢাকা, যশোর সহ অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রায় একশো বছরের প্রাচীন পূর্ত দফতরের নর্দার্ন সার্কেলের সেই দফতর জলপাইগুড়ি শহর থেকে মালদহে স্থানান্তরের নির্দেশ জারি হয়েছে। তা নিয়ে দফতরের কর্মী এবং শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের এস্টাব্লিস্টমেন্ট বিভাগ থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর ওই নির্দেশ (নম্বর-২৩৬) জারি হয়েছে। তা দফতরে পৌঁছলে কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকে।
পূর্ত দফতরের নর্দার্ন সার্কেলের জলপাইগুড়ির সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সউদাস পাল সরকারি নির্দেশের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “দফতর স্থানান্তরের বিষয়ে নির্দেশ এসেছে। এর বেশি আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ ফেব্রুরারি থেকে সরকারি নির্দেশ কার্যকরী হবে। ওই সময় থেকে দফতরের কর্মীদের মালদহ থেকে বেতন তুলতে হবে। দফতরের নথিপত্র সহ বিভিন্ন সামগ্রীও মালদহে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছে। দফতরের কর্মীদের অভিযোগ, এর আগে দফতরটিকে বুনিয়াদপুরে স্থানান্তরের চেষ্টা হয়। কিন্তু কর্মীদের অসন্তোষের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। এর পরে থেকে মালদহে স্থানান্তরের কথা শুরু হয়। প্রথম দিকে গুজব বলে কর্মীরা উড়িয়ে দেন। কিন্তু গত ২৭ ডিসেম্বর জারি করা নির্দেশ দেখে তাঁদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। কর্মীরা জানান, প্রায় একশো বছরের প্রাচীন পূর্ত দফতরের নর্দার্ন সার্কেলের ওই দফতর নেহাতই সরকারি দফতর নয়, জলপাইগুড়ি শহরের ঐতিহ্য তাঁরা মনে করেন।
জলপাইগুড়ি টাউন ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরের ইতিহাসের সঙ্গে পূর্ত দফতরের নর্দার্ন সার্কেলের নাম জড়িয়ে আছে। ওই দফতর গোপনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অর্থ প্রাচীন শহরকে রুগ্ণ করা। ওই চক্রান্তের বিরুদ্ধে শহরের বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।”
সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সলিল আচার্যও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। আমরা দলীয় ভাবে রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাব। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষেরও পথে নামা জরুরি। দলমত ভুলে দফতর স্থানান্তরের নির্দেশ রুখে দেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন। একদিকে যেমন বিরোধিতা করে মুখ খুলতে পারছেন না, তেমন সমর্থনও করছেন না দলের প্রদেশ কমিটির অন্যতম সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দলীয় স্তরে কথা বলব।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে স্থানান্তরের পরে ওই দফতরের অধীনে থাকবে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ পূর্ত বিভাগ বলা হয়েছে, কাজের তদারকির সুবিধার জন্য ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও কর্মীরা মনে করে ই-টেন্ডার এবং ইন্টারনেটের যুগে ওই যুক্তি খাটে না। তাঁদের প্রস্তাব, জলপাইগুড়ির সার্কেল অফিস রেখে তার সঙ্গে দার্জিলিং ডিভিশনকে জুড়ে দিয়ে মালদহ, দুই দিনাজপুরকে নিয়ে নতুন সার্কেল করা হলে কাজের অনেক সুবিধা হবে। |