কলেজ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে ডুয়ার্সের একাধিক কলেজে শুক্রবার দিনভর সংঘর্ষে জড়াল দুই দল ছাত্র সংগঠন। আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, বীরপাড়া, কামাখ্যাগুড়ি কলেজে এসএফআই ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে ওই সংঘর্ষে দুই সংগঠনের মোট ২৬ জন জখম হয়েছেন। গুরুতর আহত ৩ জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে ধূপগুড়িতে পুলিশ চার রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে ও লাঠি চালিয়ে সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, “পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনও খামতি ছিল না। আগামী দিনে এ ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আলিপুরদুয়ারে গিয়েছিলেন। তিনি নানা কলেজের ঘটনার কথা শুনেছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “বিভিন্ন কলেজে সিপিএম ও কংগ্রেস-এর সংগঠন যৌথ ভাবে আমাদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী ও সমর্থকদের উপরে হামলা করছে। আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।” |
ধূপগুড়িতে কলেজে উত্তেজনা। |
আগামী ১৭ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি জেলার সমস্ত কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। শুক্রবার ছিল প্রথম দফার মনোনয়নপত্র তোলার দিন। সংঘর্ষ এড়াতে বিভিন্ন কলেজে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে এসএফআই-এর অভিযোগ, কলেজ নির্বাচনে তাদের যাতে কোনও প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে না পারেন, সে জন্য আগেভাগে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক ও নেতারা লাঠিসোটা নিয়ে তৈরি ছিল। বীরপাড়া কলেজে ৩০টি আসনের মধ্যে এসএফআই সবকটি মনোনয়নপত্র তুললেও ১৩টি মনোনয়ন পত্র এসএফআই প্রার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা ছিড়ে ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এসএফআইকর্মীদের কলেজ থেকে তৃণমূলকর্মীরা বের করে দেন বলেও অভিযোগ। কামাখ্যাগুড়ি কলেজে মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে দুই সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ লাঠি চালায়। একজন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থক আহত হন। আলিপুরদুয়ার কলেজে সংঘর্ষে দুই সংগঠনের দু’জন জখম হয়েছেন।
ছাত্র সংগঠন সূত্রের খবর, বেলা ১২টা নাগাদ মিছিল করে ধূপগুড়ি কলেজে এসএফআই কর্মী ও সমর্থকরা কলেজে ঢুকতে গেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। দুই পক্ষের সমর্থক ও কর্মীরা রীতিমত একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়। পরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনের মাথা ফেটে যায়। একজন এসএফআই সমর্থক ছাত্রীর দাঁত ভেঙে যায়। দুই পক্ষের জখম মোট ৩ জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। |
পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। |
এসএফআইয়ের অভিযোগ, তৃণমূলের বাধায় তাঁরা কোনও মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি। এসএফআই-এর ধূপগুড়ি জোনাল সম্পাদক নুর আলম বলেন, “পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আমাদের মনোনয়ন তুলতে দেয়নি। আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে।” ধূপগুড়ির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা দেব দুলাল ঘোষ অবশ্য বলেছেন, “এসএফআই বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল করে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।”
এ দিন ফালাকাটায় মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দেবার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। মনোনয়নপত্র তুলতে এদিন একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে এসএফআই প্রার্থীরা কলেজের দিকে যান। ওই গাড়ি ভাঙচুর করে প্রার্থীদের উপর হামলা চালাবার অভিযোগ উঠেছে। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সংগঠনের মোট ১৫ জন জখম হন। তিন জনের মাথা ফেটে যায়। এসএফআই-এর কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে পারেনি বলে অভিযোগ। বেলা ২টা নাগাদ এসএফআই কর্মীরা ফালাকাটা মেন রোডে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক আধ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলার নেতা মৃণাল রায় বলেন, “পরিকল্পিত ভাবে এখানেও আমাদের উপর তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা নির্বাচন বয়কট করার কথা ভাবছি।” তৃণমূলের ফালাকাটা ব্লক সভাপতি সঞ্জয় দাসের অভিযোগ, “এসএফআই প্রথমে বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমাদের কর্মীরা আত্মরক্ষা করেছে।”
কামাখ্যাগুড়ি শহিদ ক্ষুদিরাম কলেজে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপির সংঘর্ষ হয়। পুলিশ লাঠি চালালে মানব সিংহ নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক কর্মী গুরুতর জখম হন। তাঁকে কোচবিহার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
এদিনই রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
|