সরকারবন্ধু বাস-মালিকেরাও এ বার সামিল ধর্মঘটে
ব্যবসার তাগিদের সামনে পিছু হটল দলীয় আনুগত্য। তাই মাস দুয়েক আগে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে যারা বাস ধর্মঘট কার্যত ব্যর্থ করে দিয়েছিল, তৃণমূল প্রভাবিত সেই ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’ও শেষমেশ সামিল হয়ে গিয়েছে ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে ডাকা ৬ জানুয়ারির বাস ধর্মঘটে। বেসরকারি বাস-মালিকদের এই সংগঠনটিরও এখন অভিযোগ, রাজ্য সরকার অর্থনীতির বুনিয়াদি নিয়ম না-মানায় তাঁদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।
ফলে আন্দোলনে নামা ছাড়া তাঁদেরও সামনে অন্য রাস্তা খোলা নেই বলে জানিয়েছেন ওই সংগঠনের নেতৃত্ব। বাস-মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের বক্তব্য: গত এক বছরে দফায় দফায় জ্বালানি-যন্ত্রাংশের দাম বাড়লেও তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়া বাড়েনি। স্রেফ লোকসানের চাপে প্রচুর রুটে প্রচুর বাস বসে গিয়েছে। এমনকী শুক্রবারই ডিজেলের দাম ফের বেড়েছে, লিটারে ৫৮ পয়সা। ফলে বাস চালানোর খরচ আরও বাড়ছে। এ দিকে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন বার বার, অথচ কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না বলে মালিকদের অভিযোগ।
এ অবস্থায় ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে গত চার মাসে বার দুয়েক ধর্মঘট ডেকেছিলেন বেসরকারি বাস-মিনিবাসের মালিকদের একাংশ। কিন্তু ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’ এবং ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র ডাকা সেই ধর্মঘটে তখন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট সামিল হয়নি মূলত সরকারের চাপেই। শুধু তা-ই নয়, গত অক্টোবরে যখন অন্যান্য সংগঠন ৪৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট শুরু করে, তখন বেশি সংখ্যায় বাস রাস্তায় নামিয়ে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট-ই তাদের বাধ্য করেছিল বারো ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনে দাঁড়ি টানতে।
মাঝের দু’মাসে কী এমন ঘটল যে, তাদের অবস্থান বদলে গেল পুরোপুরি? এ প্রসঙ্গে রুজি-রোজগারের বাধ্যবাধকতার কথা বলছেন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতারা। সংগঠনের তরফে দীপক সরকারের ব্যাখ্যা, “বার বার আশ্বাস পেয়ে আমাদের মনে হয়েছিল, সরকার বাস-মালিকদের যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করবে। তাই আমরা অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি দিয়েছি, উত্তর মেলেনি। বাধ্য হয়ে আন্দোলনের রাস্তায় যেতে হচ্ছে।” তা-ই বলে ক’দিন আগে যাদের ধর্মঘট ব্যর্থ করেছিলেন কোমর বেঁধে নামলেন, তাদের সঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন?
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের এক নেতার জবাব, “বন্যার সময়ে তো সাপে-নেউলে কিংবা বাঘে-গরুতেও এক জায়গায় আশ্রয় নেয়! কে কোন দলের, এখন আর তা দেখার অবস্থা নেই।” বস্তুত ‘সরকারবন্ধু’ সংগঠনটি এখন বাসভাড়ায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে নীতিগত প্রশ্নও তুলছে। “ডিজেলের দরে যদি সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যায়, তা হলে সরকার বাসভাড়াই বা নিজের হাতে রাখবে কেন?” মন্তব্য দীপকবাবুর। তাঁর মতে, “সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি না-বদলালে পরিবহণ শিল্প শুকিয়ে মরবে। বিপাকে পড়বেন সাধারণ মানুষ।”
অতএব, সংগঠন-নির্বিশেষে বাস-মালিকেরা এ বার হাত হাত মিলিয়ে আন্দোলনের রাস্তায় নামছেন। দীপকবাবু জানান, ডিসেম্বরের গোড়ায় দার্জিলিঙের কার্শিয়াং স্টেডিয়ামে পাঁচটি বাস-মালিক সংগঠন একসঙ্গে সম্মেলন করে ঠিক করেছিল, এর পরে আন্দোলনের যে কোনও সিদ্ধান্ত যৌথ ভাবে নেওয়া হবে। “সেই মতো পালা করে বিভিন্ন সংগঠনের অফিসে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাতেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন পিছিয়ে আসার উপায় নেই।” বলেন তিনি। তাঁদের দাবি, মালিকেরা এ ভাবে একজোট হয়ে যাওয়ায় সরকারি বাস ছাড়া এ বার ধর্মঘট মোকাবিলায় অন্য কোনও অস্ত্র সরকারের হাতে থাকবে না।
এবং এখানেই শেষ নয়। দীপকবাবু জানিয়েছেন, ৬ জানুয়ারি অর্থাৎ আগামী সোমবারের ধর্মঘটের পরেও রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াতে রাজি না-হলে ১০ জানুয়ারি পাঁচটি বাস-মালিক সংগঠন ফের বৈঠকে বসে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করবে। পাশাপাশি বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতাদের অনেকের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্যের পরস্পর-বিরোধিতাতেও সংগঠনের নেতৃত্বকে দস্তুরমতো বিব্রত হতে হয়েছে। “পরিবহণমন্ত্রী বাস-মালিকদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে যা বলেন, আর পরে যা বিবৃতি দেন, তাতে হামেশাই বিস্তর ফারাক থাকে।” আক্ষেপ সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার।
পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য এই অভিযোগ সম্পর্কে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ‘সরকারবন্ধু’ বাস-মালিকেরাও ধর্মঘটের পথে হাঁটায় সরকারের অবস্থান বদলাবে, এমন কোনও ইঙ্গিতও দেননি। বরং এ দিন মদনবাবুর মন্তব্য, “ধর্মঘট করেও ওঁরা কাজ হাসিল করতে পারবেন না।” শুনে বাস-মালিকেরা কী বলছেন?
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না-হলে ধর্মঘট হবেই। একমাত্র যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় স্বয়ং প্রকাশ্যে ভাড়াবৃদ্ধির আশ্বাস দেন, তা হলেই ওঁরা সিদ্ধান্ত বদলের কথা ভাবতে পারেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.