মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে তৃণমূল সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার দলীয় মুখপত্রের বার্ষিক অনুষ্ঠানে কামদুনি, মধ্যমগ্রামের ঘটনার উল্লেখ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “আমরা মহিলাদের রক্ষা করতে পারছি না। কামদুনিতে পারিনি। মধ্যমগ্রামেও পারলাম না। মাসে একটা, দুটো, তিনটে ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর যারা ঘটাচ্ছে, তারা প্রবল বিক্রমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “সরকার সমাজবিরোধীদের উচ্ছৃঙ্খলতা বন্ধ করতে চায় না। তাই তারা যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে।”
মধ্যমগ্রামের ঘটনা নিয়ে গত তিন দিন ধরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে মন্তব্য করে মুখ্যসচিব বিতর্ক আরও বাড়িয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের একাংশও মৃতদেহকে নিয়ে রাজনীতির নিন্দা করছে। সে প্রসঙ্গ টেনে বুদ্ধবাবু বলেন, “মেয়েটিকে হত্যা করল কে? কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি? এখন ওদের পাশে না দাঁড়ালে ওই ট্যাক্সি-চালককে ভয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা তা হতে দেব?” সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “নির্যাতিতা যখন বেঁচে ছিল, তখন পুলিশ কিছু করেনি। এখন মৃত্যুর পরে তাদের তৎপরতা বেড়েছে।” |
সিপিএমের দলীয় মুখপত্রের বার্ষিক অনুষ্ঠানে
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
কামদুনি থেকে মধ্যমগ্রাম সব ক্ষেত্রেই নির্যাতিতাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোই যে সিপিএমের নীতি, দলের নেতা-কর্মীদের তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। নারী নির্যাতনের জন্য রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, “সরকার প্রতিবাদ চায় না। হয় ভয় দেখিয়ে মাথা নিচু করে দিতে চায়। না হলে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চায়। কামদুনিতে তা-ই করল। এখন মধ্যমগ্রামেও করছে।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “সরকারের এই ভূমিকায় সমাজ জেতে না। সমাজবিরোধীরা জেতে।” এমন হিংস্র দল রাজ্যে কখনও ক্ষমতায় আসেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের সর্বশক্তি নিয়ে লাঞ্ছিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
মধ্যমগ্রামে কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছোট্টু তালুকদার ফরওয়ার্ড ব্লক করত বলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন মুকুল রায়-সহ তৃণমূল নেতারা। এ দিন সেই অভিযোগ উড়িয়ে ফ ব-র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক হরিপদ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের দলের সর্ব স্তরের সদস্যপদ খতিয়ে দেখে খোঁজ নিয়েছি। ওই ব্যক্তি কোনও কালেই ফ ব-র কেউ ছিল না!”
এমন মন্তব্যের জন্য তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যায় কি না, তা-ও দলে আলোচনা করে দেখবেন হরিপদবাবুরা। ঘটনায় কারা কী ভাবে জড়িত, তা উদঘাটনের জন্য ফব সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে। একই দাবি করেছে রাজ্য বিজেপি-ও। আজ, শনিবার বিহার থেকে বিজেপি-র মহিলা প্রতিনিধিদল কলকাতায় এসে ঘটনাস্থলে যাবেন এবং ধর্ষিতা ও নিহত কিশোরীর বাবা-মা’র সঙ্গে দেখা করবেন। ওই দলে থাকবেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কিরণ ঘাই এবং বিহারের প্রাক্তন মন্ত্রী রেণুদেবী। মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডের প্রতিবাদেই সোমবার নবান্নর সামনে বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি-র যুব মোর্চা। বিজেপি-র কলকাতা জেলা কমিটি মঙ্গলবার মৌনী মিছিল করবে। |