স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকারের পর থেকে লক আপেই সারা দিন কেটেছে। তার মধ্যেই ছেলেদের বড্ড দেখতে ইচ্ছা করছিল আব্দুল নুরের। সে কথা পুলিশকে জানাতে অনুমতিও মিলেছিল। কিন্তু বাবার ইচ্ছাতে অনুমতি দিল না জাভেদ ইকবাল আর আয়েসার আনম। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, “আব্বু বিনা দোষে মাকে মেরেছে। তার মুখও দেখতে চাই না আমরা।”
বৃহস্পতিবার সাত সকালে এই দুই ছেলেদের পাশেই ঘুমন্ত স্ত্রী রেজিনা পরভিনকে শাবল দিয়ে পিটিয়ে খুন করেছেন আব্দুল নুর। তারপর দোকানে চা-বিস্কুট খেয়ে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর পুলিশ অভিযুক্ত দুই নাবালক পুত্র ও বাবা আব্দুল নুরকে এ দিন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করে দুটি আলাদা গাড়িতে করে। দুই ভাইয়ের থেকে গোপন জবানবন্দি নেন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সোমা দাস। সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী জানান, এ দিন জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শুভ্রকান্তি ধর অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য দিকে ফরাক্কা থানার পুলিশ দুই নাবালক শিশুর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার পরই তাদের মামা আনিরুল ইসলামের হাতে তুলে দিয়েছে।
|
ফরাক্কায় এনটিপিসি মোড়ে নজরুল পল্লির বাসিন্দা আব্দুল নুর পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। তিনি ১৫ দিন ফরাক্কায় এবং বাকি ১৫ দিন কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে নিজের চেম্বারে বসতেন । তাঁর কথায় খুনের কারণ, “বাড়িতে আমার না থাকার সুযোগে স্ত্রীর গতিবিধি ঠিক ছিল না।” স্ত্রীর প্রতি এই সন্দেহের বশেই যে খুন তা উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তেও। তবে প্রতিবেশিরা সাফ জানিয়েছেন, এই সন্দেহ একেবারই অমূলক। অরঙ্গাবাদের এক বিত্তশালী বিড়ি কারখানার মালিকের নিকট আত্মীয় রেজিনা অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের মেয়ে ছিলেন। মৃতার দাদা আনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বোনের সুখের জন্য যখন যা চেয়েছে ভগ্নিপতি তাই দেওয়া হয়েছে। ইদানীং সে কলকাতায় একটি বড় ফ্ল্যাট কিনতে চেয়ে বোনকে চাপ দিচ্ছিল বাবার বাড়ি থেকে এনে দিতে। বোন রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবেই এই খুনের ঘটনা।” তবে স্ত্রীকে খুনের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতাপের সুর নেই। ঠাণ্ডা গলায় আব্দুল নুর বলেন, “আমি যা করেছি তার জন্য আফশোস নেই আমার। যা সাজা হবে মেনে নেব। শুধু কষ্ট হবে ছেলেগুলোর জন্যই।” |