সকালে বাবার সাইকেলে চেপে পাড়ার অলিগলি ঘুরেছে। এরপর সমবয়সী জনা কয়েক বাচ্চার সঙ্গে খানিক খেলাও করেছে বছর আড়াইয়ের রূপম বিশ্বাস। বেলা ১০টা নাগাদ মা টুসি বিশ্বাস ছেলের খোঁজ করেও হদিশ পাননি। বিষয়টি পড়শিদের জানান তিনি। ছেলেকে খুঁজতে বাজারের ছোট্ট মুদির দোকানের ঝাঁপ ফেলে ছুটে আসেন বাবা রূপেশ বিশ্বাস। সকলে শুরু করেন খোঁজ। মিনিট কুড়ি পরে ছোট্ট রূপমের নিথর দেহ মেলে পাশের নির্মীয়মাণ একটি বাড়িতে। শুক্রবার সকালে করিমপুর আনন্দপল্লি এলাকার ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
যে বাড়ি থেকে রূপমের দেহ উদ্ধার করা হয়, তিন মাস ধরে সেটির নির্মাণের কাজ বন্ধ ছিল। ঘরের জানালা-দরজা ইট দিয়ে বন্ধ ছিল। সেখানে কোনও শিশু ঢুকতে পারার কথা নয়। তাই পড়শিদের ধারণা, পারিবারিক আক্রোশবশত কেউ রূপমকে খুন করে ওখানে ফেলে দিয়েছে। শিশুটির দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ধারণা, কিছু চাপা দিয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। এসডিপিও সুনীল সিকদার বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” |
এই ঘটনায় এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা রূপেশ বিশ্বাস পাগলের মত ঘুরছেন বাড়ির সামনের একফালি ফাঁকা যায়গায়। মাঝেমধ্যেই ডুকরে উঠছেন। আর বিড়বিড় করে বলছেন ‘‘সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সাইকেল থেকে ছেলেকে নামিয়ে আমি দোকানে যাই। কিছুক্ষণ পর খবর পায় ছেলের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ি ফিরে দেখি প্রতিবেশী সোমেন বিশ্বাস একটি নির্মীয়মাণ ঘরের মধ্যে থেকে ছেলেকে বের করে নিয়ে এল।” বছর আড়াই বয়স হলেও পাড়ায় বেশ জনপ্রিয় ছিল রুপম। দুধসাদা গায়ের রং আর নীল চোখের শিশুটিকে পাড়ার কাকি, জেঠিরা অনেকেই ‘অ্যাংলো’ বলেই ডাকত। প্রতিবেশী স্বপ্না মণ্ডল বলেন, ‘‘ওকে আদর করেনি এমন মানুষ এই পল্লিতে নেই। আজকে ভাবতেই পারছি না ও আর নেই।” স্থানীয় করিমপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের কালু স্বর্ণকার বলেন, ‘‘আড়াই বছরের একটা বাচ্চার পক্ষে ওই ঘরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ওকে কেউ ওই ঘরে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলে অপরাধী ধরা পড়বে।” একই সুর করিমপুরের বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলার ভাষা আমার নেই। অপরাধীর কঠোর শাস্তি দাবি করছি।” |