আনন্দ অমৃতরাজের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন্সি জমানার শুরুতেই কি ভারতের ডেভিস কাপ দলে পট পরিবর্তন ঘটতে চলেছে?
লিয়েন্ডার পেজের প্রস্থান? মহেশ ভূপতির প্রবেশ?
যদিও সেটা অমৃতরাজ-প্রভাবিত নয়। বরং ভূপতি প্রভাবিত।
ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের সংস্থার (আইটিপিএ) সর্বময় কর্তা হিসাবে এআইটিএ-র কাছে মহেশ ভূপতির এখন অন্য ধরনের তাত্পর্য! ভারতীয় টেনিসমহলের অন্দরের খবর, সর্বভারতীয় টেনিস কর্তারা বাস্তবটা বুঝতে পারছেন যে, এ দেশের টেনিস অদূর ভবিষ্যতে এআইটিএ-র মতোই সমান ভাবে আইটিপিএ দ্বারাও চালিত হবে। ফলে ভেতরে-ভেতরে প্লেয়ারদের সংস্থার সর্বময় শক্তি-র সঙ্গে সমঝোতার হাত বাড়িয়েছে এআইটিএ। এমনও শোনা যাচ্ছে, ‘সমঝোতা’-র অন্যতম শর্ত হিসাবে আইটিপিএ তাদের অপছন্দের যে অন্যতম প্রভাবশালী এআইটিএ কর্তাকে ভারতীয় টেনিস প্রশাসন থেকে ছেঁটে ফেলার দাবি তুলেছে, তাতেও অনিল খন্না গোষ্ঠী বিরূপ নন। তলে-তলে সেই ‘কাজ’ এআইটিএ-তে নাকি শুরুও হয়েছে!
ইনদওরে ৩১ জানুয়ারি-২ ফেব্রুয়ারি চিনা তাইপে-র বিরুদ্ধে আঞ্চলিক গ্রুপের প্রথম রাউন্ড আনন্দ অমৃতরাজের দলের প্রথম টাই। যার জন্য ১১ জানুয়ারি মুম্বইয়ে ভারতীয় টেনিস দল নির্বাচন করবে এআইটিএ। সর্বভারতীয় প্রভাবশালী এক টেনিস কর্তার কথায়, দল গঠনের ইদানীংকার স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী তিন+এক ফর্মুলাতেই টিম হবে। অর্থাত্, তিন সিঙ্গলস প্লেয়ারের সঙ্গে একজনই বিশেষজ্ঞ ডাবলস প্লেয়ারকে নির্বাচন করা হবে।
টেনিসমহলে খবর, লিয়েন্ডার দল গঠনের এই ফর্মুলায় অখুশি। কিন্তু সেটা আর আগের মতো এআইটিএ-র কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। নিজের ঘনিষ্ঠমহলে লিয়েন্ডার বলেছেন, এতে ডাবলস টিমের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না। চিনা তাইপে টাইয়ে তিনি খেলবেন কি না সেটা সঠিক সময়, সঠিক মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর পছন্দ, দু’জন সিঙ্গলস প্লেয়ারের সঙ্গে দু’জন বিশেষজ্ঞ ডাবলস প্লেয়ার। গত বছর ভারতের শেষ দু’টো টাইয়েই লিয়েন্ডার দু’জন আনকোরা তরুণকে নিয়ে ডাবলস খেলেছেন। এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর পার্টনার ছিলেন সনম সিংহ। আর আগে ফেব্রুয়ারিতে কোরিয়া ম্যাচে পূরব রাজা। দু’টোই জিতলেও লিয়েন্ডারকে প্রচুর বাড়তি চাপ সামলাতে হয়েছে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের মত।
তা ছাড়া, ভারতের হয়ে যতই সবচেয়ে বেশি টাই (৫০) খেলুন। যতই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতুন (সিঙ্গলস-ডাবলস মিলিয়ে জয়-হারের সংখ্যা ৮৮-৩২), সাম্প্রতিক কালে লিয়েন্ডার কিন্তু বেশ কয়েক বার জাতীয় দল থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ সরে দাঁড়িয়েছেন। শেষ তিন বছরে ভারতের ছ’টা ডেভিস কাপ টাইয়ে লিয়েন্ডার খেলেছেন তিনটি, বাকি তিনটি খেলেননি। এবং সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ টাই ছিল না ভারতের ২০১১ ওয়ার্ল্ড গ্রুপে সার্বিয়া, সে বারই ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফে জাপান, ২০১২ আঞ্চলিক গ্রুপ অবনমন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড। তিন বারের মধ্যে দু’বারই ভারতের ম্যাচ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শেষ হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই। এ বারও অস্ট্রেলীয় ওপেন শেষ হওয়ার চার দিন পরেই ইনদওরে ডেভিস কাপ। লিয়েন্ডার-স্টেপানেক শক্তিশালী জুড়ি মেলবোর্নে ফাইনালে উঠলে সেক্ষেত্রে চল্লিশ বছরের লি-কে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ইনদওরের কোর্টে প্র্যাকটিসে নেমে পড়তে হবে। সেটাও তাঁর এই ডেভিসে না খেলতে চাওয়ার একটা কারণ বলে টেনিসমহলে অনেকের ধারণা।
আবার মহেশ ২০১১-র সেপ্টেম্বরে শেষ ডেভিস কাপ খেলার পর এআইটিএ-র সঙ্গে রেষারেষিতে দেশের হয়ে আর নামেননি। সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থাও তাঁকে বকলমে সাসপেন্ড করে। কিন্তু কর্নাটক হাইকোর্ট সেই নির্বাসনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় মহেশের এই মুহূর্তে টেকনিক্যালি ভারতীয় দলে নির্বাচিত হতে বাধা নেই। নিজের ঘনিষ্ঠমহলের কাছে মহেশ অন্তত আরও এক বছর চুটিয়ে খেলে অবসরের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে যেমন গ্র্যান্ড স্ল্যাম, এটিপি ট্যুর আছে, তেমনই আছে ডেভিস কাপ। এমনকী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন ডাবলস বিশেষজ্ঞ রাজীব রাম-কে গোটা ২০১৪ মরসুমের জন্য পেশাদার সার্কিটে পার্টনার বেছেছেন।
এবং এআইটিএ-র অন্যতম কর্তা হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলছেন, “প্রতি বারের মতো এ বারও আমরা দেশের সমস্ত যোগ্য টেনিস প্লেয়ারের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, সেই প্লেয়ার চিনা তাইপে ম্যাচের জন্য অ্যাভেলেবল কি না। সেই তালিকায় লিয়েন্ডার যেমন আছে, তেমন মহেশও আছে। এখন দশ তারিখের মধ্যে যে-যে প্লেয়ার জানাবে ওই ম্যাচে তাদের পাওয়া যাবে, দল নির্বাচনে তাদের নামই কেবল বিবেচনা করা হবে।”
যার মানে, ঠারেঠোরে এআইটিএ-ও মেনে নিচ্ছে, আসন্ন ডেভিস কাপে লি-র প্রস্থান, হেশের প্রবেশ ঘটলেও ঘটতে পারে! |