|
|
|
|
|
বিদায়ের আগে যেতে চান পাকিস্তানে
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি
৩ জানুয়ারি |
|
প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ছাড়ার আগে একটি বার পাকিস্তানে যেতে চান তিনি।
গত দশ বছরের এই অপূর্ণ ইচ্ছাটুকু আজ তাঁর বিদায়ী সাংবাদিক সম্মেলনে উজাড় করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পাকিস্তানও।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের গাহ গ্রামে জন্ম মনমোহনের। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বার বার পাকিস্তানে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিপাক্ষিক সফরের নানা টানাপোড়েন। আজ মনমোহন জানিয়েছেন, “পাকিস্তানে আমি অবশ্যই যেতে চাই। যে গ্রামে জন্মেছিলাম তা এখন পশ্চিম পঞ্জাবের অংশ।”
২০০৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন মনমোহন। নিয়ন্ত্রণরেখাকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে দু’দেশের মানুষের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলেছেন। তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শ্রীনগর এবং মুজফ্ফরাবাদের মধ্যে ঐতিহাসিক বাস যোগাযোগ চালু করেছিলেন তিনিই।
কিন্তু ২০০৮ সালে পাক সন্ত্রাসবাদীদের হাতে মুম্বই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা মনমোহনের যাবতীয় শান্তি প্রয়াসে জল ঢেলে দেয়। আজ প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আসিফ আলি জারদারি অথবা নওয়াজ শরিফের থেকেও শান্তি প্রক্রিয়ার প্রশ্নে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন মুশারফকেই। তাঁর দাবি, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের দোরগোড়ায় চলে এসেছিল তাঁর সরকার। কিন্তু, মুশারফ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “অনেক বার ভেবেও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যাওয়া হয়ে ওঠেনি আমার। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ শেষ করার আগে এক বার পাকিস্তান সফরের আশা ছাড়িনি আমি।” পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র তাসনিম আসলাম জানিয়েছেন, মনমোহনকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁরা। মনমোহন তা গ্রহণও করেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ইসলামাবাদ তৈরি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর আশা ‘দুরাশা’ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক কর্তারা। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় আসার পরই মনমোহনকে সে দেশে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন। সেই আমন্ত্রণ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কিন্তু বিদেশ ও অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহনের ইসলামাবাদ সফরের ঘোরতর বিরোধিতা করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাতে সায় দিয়েছিলেন আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা। প্রণববাবু তথা কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতার মত ছিল, পাকিস্তান নিয়ে রোম্যান্টিসিজমের কোনও জায়গা নেই। মুম্বই সন্ত্রাসে অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া এবং ভারত-বিরোধী জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করা নিয়ে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও কথা রাখেনি ইসলামাবাদ। ফলে এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান গেলে, খালি হাতেই ফিরতে হবে মনমোহনকে। সংসদে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়বে দল তথা সরকার। শেষ লগ্নে পাকিস্তান সফর করতে গেলেও সেই যুক্তির মুখে পড়তে হবে মনমোহনকে।
পাকিস্তানের পাশাপাশি তাঁর বিদেশনীতির আরও একটি প্রিয় স্তম্ভ, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়েও আজ বিদায়বেলায় একই ভাবে সরব হয়েছেন মনমোহন। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তিটি তাঁর আমলের ‘শ্রেষ্ঠ সাফল্য’। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও পরমাণু চুল্লিতে বিনিয়োগ করতে পারেনি আমেরিকা। মার্কিন বেসরকারি সংস্থাগুলির প্রবল চাপ সত্ত্বেও ভারতীয় সংসদে পাশ হওয়া পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল বদলানো সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতারি নিয়ে তিক্ত হয়েছে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক। দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্কও খুব ভাল জায়গায় নেই।
পরমাণু চুক্তি কার্যকর করার সমস্যা নিয়ে কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে দেবযানীর বিষয়টি কার্যত ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “এ সব সামান্য সমস্যা। কূটনীতির মাধ্যমে এর সমাধান হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|