|
|
|
|
অর্থনীতির ইনিংস গড়ার কাজে খামতি
মেনেও বললেন, এখনও সময় আছে
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
৩ জানুয়ারি |
আর্থিক সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলার চেষ্টার করেছেন। ব্যাটে-বলে হয়নি। শত চেষ্টাতেও লাগাম টানা যায়নি আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে। সম্ভব হয়নি সে ভাবে কাজের সুযোগ তৈরি করাও। ভোট-ময়দানে কড়ায়-গণ্ডায় যার মূল্য চোকাতে হয়েছে কংগ্রেসকে। শুক্রবার রাজত্বের মেয়াদ ফুরোনোর পাঁচ মাস আগে অর্থনীতির হাল ফেরাতে নিজের খামতির কথা খোলাখুলিই স্বীকার করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
তবে একই সঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি, যেটুকু সময় হাতে আছে, তার মধ্যে যতটা সম্ভব সংস্কারের পথে এগোনোর চেষ্টা জারি থাকবে। মনমোহনের দাবি, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পাঁচ মাস যথেষ্টই লম্বা সময়। পরিস্থিতি অনুকূল হলে এই সময়ে যেখানে যখন সুযোগ মিলবে, সেখানেই সংস্কারের কাজ হবে। আরও সহায়ক করা হবে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ। |
|
তিন বছর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স। |
কিন্তু ঠিক কোন পথে হেঁটে এই কাজে ইউপিএ-সরকার সফল হবে, তার হদিশ এ দিনও দিতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। ফলে সেই শুক্নো প্রতিশ্রুতিতে চিঁড়ে ভেজেনি শেয়ার বাজারে। যে কারণে তিনি অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে বলার পরেও এ দিন শেয়ার সূচকের মুখ ছিল নীচের দিকেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকের আশা ছিল, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন মনমোহন। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। তবে ভোটের আগে আমজনতার মন পেতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো কিংবা ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর মতো কোনও ইঙ্গিত যে প্রধানমন্ত্রী দেননি, তাতেই আশ্বস্ত বোধ করেছেন অনেকে। ঘটনাচক্রে শুক্রবার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ফের এক দফা বেড়েছে। কাজেই অন্তত তাতে যে ভর্তুকির বহর বাড়েনি, তাতে আশ্বস্ত বোধ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
কল-কারখানায় চাকরির যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়নি বলে এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনমোহন। কিন্তু তার জন্যও সেই কেন্দ্রের দিকেই পরোক্ষে আঙুল তুলছে শিল্পমহল। বণিকসভা ফিকি-র সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লার মতে, “বৃদ্ধি না-হলে কর্ম সংস্থান হতে পারে না।” উল্লেখ্য, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। এক দশকে যা সর্বনিম্ন। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অ্যাসোচ্যাম সভাপতি রাণা কপুরেরও যুক্তি, বৃদ্ধি শ্লথ হওয়াই চাকরির অভাবের কারণ। কপুর বলেন, “এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্দিষ্ট নীতির অভাব।” কাজের সুযোগ তৈরিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন মনমোহন। কিন্তু পিএইচডি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শরদ জয়পুরিয়ার বক্তব্য, এই শিল্প বাজার, ঋণ, পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের অভাবে ভুগছে।
খামতির কথা মানলেও প্রধানমন্ত্রীর দাবি, দেশের অর্থনীতিকে ফের চড়া হারের বৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে এনেছিল তাঁর সরকারই। তিনি বলেন, “আমেরিকা, ইউরোপ সমেত সারা বিশ্বের সঙ্কট সত্ত্বেও বৃদ্ধি অব্যাহত থেকেছে। সমস্যা কাটাতে যে সব পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তারও ফল মিলছে।” কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, চড়া বৃদ্ধির হারের কৃতিত্ব যদি সরকারের কাণ্ডারি হিসেবে তাঁর হয়, তা হলে তা ঝিমিয়ে পড়ার দায় শুধু বিশ্বজোড়া মন্দার ঘাড়ে কেন?
মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সমস্যার দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য এই চড়া মূল্যবৃদ্ধিই দায়ী বলে মনে করছে দলীয় নেতৃত্ব। এ দিন সে কথা মেনেও নিয়েছেন মনমোহন। কিন্তু তার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে যুক্তি দিয়েছেন, সকলের জন্য উন্নয়নের নীতি মেনে খাদ্যশস্যের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে। একশো দিনের কাজে গ্রামে মানুষের বেতন বেড়েছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের হাতে বেশি টাকা এসেছে। দারিদ্রসীমার নীচের মানুষের সংখ্যা কমেছে। তা ছাড়া, খাদ্য-সুরক্ষা আইনও মূল্যবৃদ্ধির আঁচ থেকে গরিব মানুষকে রক্ষা করবে বলে তাঁর দাবি।
কিন্তু বণিকসভার কর্তারা মনে করছেন, চড়া মূল্যবৃদ্ধির পিছনে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সমস্যাই একমাত্র কারণ নয়। কারণ, খাদ্যপণ্যের জোগান বাড়ানো, সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি, ফল-শাকসব্জি পচে যাওয়ার আগেই তা বাজারে পৌঁছনোর বন্দোবস্ত করতে সরকার ব্যর্থ। ফলে সুদ বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর চেষ্টা করতে হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। যার ধাক্কায় বিপদে পড়েছে শিল্প। সরবরাহ নিয়ে সমস্যার দিকটি অবশ্য স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। তার জোগান বাড়ানোর দায়িত্বও যেন রাহুল গাঁধীর কাঁধে তুলে দিতে চেয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, এ নিয়ে রাহুল কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
অনেকে মনে করছেন, নরসিংহ রাওয়ের অর্থমন্ত্রী মনমোহনের মতো সাফল্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন পাননি, এ দিনের বয়ানের পরে এই ধারণাই ফের পোক্ত হল। |
|
|
|
|
|