|
|
|
|
রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ, খয়রাশোলের গ্রামে কাজ থামালেন বাসিন্দারা
নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
বোর্ডে লেখা রাস্তা হবে গ্রাম পর্যন্ত। অথচ গ্রামে ঢোকার মুখে থাকা সেতুর আগেই রাস্তার কাজ শেষ করে দিয়েছেন ঠিকাদার। শুধু তাই নয়, সেই কাজও হচ্ছে নিম্নমানের। এই দু’টি অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া ঠিকাদারের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আটকে রেখে একটি রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিলেন খয়রাশোলের চাপলা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। বৃহস্পতিবার রাস্তার কাজ আটকানোর পরে শুক্রবারই বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসী খয়রাশোলের বিডিও-র কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু বিষয়টি আমার এক্তিয়ারে পড়ে না। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য জেলাপ্রশাসনকে জানাব।” |
|
থমকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের ভীমগড়-চাপলা ৮.৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে গত ৩ ফেব্রুয়ারি। বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লক্ষ ৭৭৩ টাকা। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি রাস্তা সম্পূর্ণ করার কথা ছিল। কাজ প্রায় শেষের মুখে। শুরু হয়েছে পিচ দেওয়ার কাজ। চাপলা গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক সংযোগকারী ওই রাস্তাটি ভীমগড়ে লাগানো বোর্ড অনুযায়ী চাপলা পর্যন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে চাপলার মূল গ্রামে ঢোকার মুখে স্থানীয় একটি ক্যানালের আগেই ঠিকাদার রাস্তার কাজ শেষ করে দিচ্ছেন। প্রথম যখন কাজ শুরু হয়েছিল তখন থেকেই গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা হবে বলে গ্রামবাসীদের অশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। কিন্তু রাস্তার কাজ শেষে পিচ ঢালার কাজ শুরু হতেই বিষয়টি ধরা পড়ে। বোঝা যায় রাস্তাটি আর গ্রাম পর্যন্ত যাবে না। এর ফলে সমস্যায় পড়বেন ওই গ্রামের অন্তত ১০০টি পরিবার। উপকৃত হবেন অজয় নদের ওপারে থাকা বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষও। তাঁরা ভরা বর্ষা বাদ দিলে সারা বছর নদী পেরিয়ে এই রাস্তায় ব্যবহার করেন বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তারই প্রতিবাদে বাসিন্দাদের একাংশ ঠিকাদারের যন্ত্রপাতি আটকে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানান।
এ দিন এলাকার বাসিন্দা শচীন সরকার, বীরেন রায়, বাপি প্রামাণিক, বিশ্বজিৎ রায়রা বলেন, “শুধু রাস্তার কাজ গ্রামের আগেই শেষ করে দেওয়া নয়, রাস্তা তৈরির কাজও হচ্ছে নিম্নমানের। রাস্তার যেটুকু অংশে পিচ ঢালা হয়েছে, সেখানে পায়ে একটু চাপ দিলেই পিচ উঠে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রাস্তার কয়েকটি বাঁকে (যেখানে রাস্তা থেকে নয়ানজুলি অনেকটা নীচে) প্রয়োজন থাকলেও কোনও গার্ডওয়াল দেওয়া হয়নি। ফলে বর্ষায় মাটি সরে রাস্তা ভেঙে গিয়ে বিপদ ঘটবে।” সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নকুলচন্দ্র বাড়ুই অবশ্য বলছেন, “চাপলা সেতুর আগে পর্যন্তই রাস্তার দৈর্ঘ্য ৮.৬৫ কিলোমিটার। রাস্তাটি ওই পর্যন্তই করার কথা। ওই রাস্তা গ্রামে ঢুকলে মানুষের সুবিধা হত জানি, কিন্তু আমাকে দেওয়া ওয়ার্ক অর্ডারের বাইরে আমি কী ভাবে যাব! খরচের বরাদ্দই বা কী ভাবে জুটবে! অন্য কোনও প্রকল্প বা প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় পৃথক অর্ডার পেলে, তবেই এ কাজ করা সম্ভব।” নিম্নমানের রাস্তা তৈরির অভিযোগও তিনি মানেননি। তাঁর যুক্তি, “আমাকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ওই রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত দায়িত্ব তো আমারই। নিম্ন মানের কাজ করলে তো আমাকেই ভুগতে হবে!”
এ দিকে, দায়িত্বপ্রাপ্ত এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জীব হালদারও বলেন, “রাস্তাটি শেষ হওয়ার কথা চাপলা সেতুর আগেই। নিয়ম মেনেই কাজ চলছে। যখন এ ব্যাপারে সার্ভে হয়েছিল তখনও চপলা সেতুটি সম্পূর্ণ হয়নি।” বাসিন্দারা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের প্রশ্ন, রাস্তা যদি গ্রামকেই না জুড়লো তা হলে ওই প্রকল্পের কি অর্থ? |
|
|
|
|
|