রবিবার বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। আর শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকে সেই ম্যাড়মেড়ে নির্বাচন জমিয়ে দিল বিএনপি ও তার জোটশরিক জামাতে ইসলামি।
নির্বাচন বাতিলের দাবিতে শনিবার থেকেই বিএনপি-জামাতের লাগাতার অবরোধ চলছে। তার মধ্যেই আবার তারা হরতালের ডাক দেওয়ায় ধারাবাহিক নাশকতার আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছেন সাধারণ মানুষ। নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধানত সেই কারণেই গত কয়েক দিন অবরোধের তেমন প্রভাব জনজীবনে পড়েনি। কিন্তু আজ কাল গভীর রাত থেকেই একের পর এক বাসে আগুন দেওয়া, ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছোড়ার ঘটনা শুরু হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহি, সিলেট, রংপুর, লালমণির হাটে আতঙ্ক ছড়াতে দফায় দফায় বোমাবাজি করেছে বিএনপি-জামাতের কর্মীরা। দিনাজপুরে পেঁয়াজ বোঝাই একটি ট্রাকে আগুনে বোমা ছোড়ার পরে সেটি উল্টে খাদে পড়ে গেলে চালক ও তাঁর সঙ্গী মারা গিয়েছেন। ঢাকায় রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ায় সাত জন জখম হয়ে মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। |
নেত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে থেকে পুলিশি পাহারা সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বিএনপি সাংসদরা এ দিন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন। বিএনপির চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতার না গৃহবন্দি, তা স্পষ্ট করার জন্য আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অবশ্য জানিয়েছেন, খালেদাকে গ্রেফতার বা গৃহবন্দি কোনওটাই করা হয়নি। বিদেশি দূতেরা অবাধে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। বিরোধী নেত্রীর নিরাপত্তায় শুধু তাঁর বাড়ির সামনে কিছু বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু খালেদার ‘মুক্তি’ চেয়েই বিএনপি-জামাত নেতৃত্ব হরতাল ডেকেছে।
প্রধান বিরোধী বিএনপি-জোট ভোট বর্জন করায় ইতিমধ্যেই ১৫৩টি আসনে এক জন করে প্রার্থী জিতে গিয়েছেন। রবিবার ৩০০ আসনের মধ্যে নির্বাচন হবে ১৪৭টিতে। বেশির ভাগ আসনে আওয়ামি লিগ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। কয়েকটি জায়গায় ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ-এর মতো জোটশরিকরাই আওয়ামি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ে নেমেছেন। কিন্তু এর ফলে পরিচিত উৎসবের মেজাজ হারিয়েছে নির্বাচন।
আতঙ্ক ছিলই। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব ভোটের আগের দিন থেকে হরতাল ডাকায় আশঙ্কা আরও বাড়ল। জামাতের শক্তির নিরিখে ঢাকা, চট্টগ্রাম,রাজশাহি-সহ ১৯টি জেলার ৮০টি আসনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সব জেলায় নির্বাচনের পরেও সেনা মোতায়েন রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, নির্বাচন মিটে গেলেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।
|