উৎসবের মরসুম কেটে গেল, প্রকৃতির মুখভার কাটছে না এখনও। গত দু’সপ্তাহ জুড়ে লাগাতার ঝড়-বৃষ্টি, বন্যায় বিপর্যস্ত ইংল্যান্ডের একাংশ, স্কটল্যান্ড। নতুন বছরে পরিস্থিতি বদলাবে, আশা দেখিয়েছিলেন আবহবিদরা। সে তো হলই না। উল্টে ফের চোখরাঙানি প্রকৃতির। ঝড়ের অশনি সঙ্কেত। ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে হাওয়া আর ৩০ ফুট উঁচু ঢেউ ইঙ্গিত দিচ্ছে তারই। আতঙ্কে প্রহর গুনছেন বাসিন্দারা।
আতঙ্কে দিন কাটছে আমেরিকার বাসিন্দাদেরও। প্রবল ঠান্ডা আর তুষারঝড়ের জেরে উত্তরপূর্ব আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। গত কয়েক দিন একটানা তুষারপাতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঢেকে গিয়েছে প্রায় দু’ ফুট পুরু বরফে। নিউ ইয়র্ক আর নিউ জার্সিতে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। বস্টন আর নিউ ইয়র্কে অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু শুক্রবারেই আমেরিকার বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রায় দু’হাজার তিনশো বিমান বাতিল হয়েছে। বহু রাস্তা বন্ধ। আবহ দফতর তুষার ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। |
ঢেউ আছড়ে পড়ছে স্কটল্যান্ডে সল্টকোস্টের লাইনে। তার মধ্য দিয়েই ছুটছে ট্রেন। শুক্রবার। ছবি: এপি |
এ দিকে বড়দিনটা তো মাটি হয়েছেই। দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বহু বাড়িতেই সান্তা বুড়ো এ বার আর ছোটদের উপহার দিতে পারেনি। তার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ঝড়ে রেল লাইনে গাছ পড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন যোগাযোগ। শহরতলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ব্রিটেনের প্রাণকেন্দ্র লন্ডন। খারাপ আবহাওয়ায় বাতিল হয়ে যায় বহু উড়ান। ফলস্বরূপ অনেকেই ছুটিতে বাড়ি ফিরতে পারেননি। যদি বা অন্য বিমানে জায়গা পেয়ে কোনও মতে বাড়ি ফিরেছেন, উপহার ফেলে আসতে হয়েছে বিমানবন্দরেই। কেন্ট-সাসেক্স-সারে-র বাসিন্দাদের আরও খারাপ অবস্থা। জলবন্দি হয়েই কেটে গিয়েছে উৎসবের দিনগুলো। শুধুমাত্র প্রয়োজনের জিনিসটুকু কিনতে নৌকো নিয়ে বেরোনো। কোথাও আবার তা-ও অসম্ভব হয়ে ওঠে। জল জমে বরফ। উপরন্তু বিদ্যুৎ নেই।
গত সাতটা দিনে পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। তার উপর আবার নতুন করে ঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা। ৫০০ অঞ্চলে জারি করা হয়েছে বন্যার সতর্কতা। ডেভন, কর্নওয়েল এবং দক্ষিণ ওয়েলসের উপকূলবর্তী অঞ্চলে লাল সঙ্কেত দেখানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। পাঁচটা মানুষের উচ্চতার সমান ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের তীর ঘেঁষা এলাকাগুলোতে। নিউপোর্ট, দক্ষিণ ওয়েলসের বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা হয়েছে নিরাপদ স্থানে। যে সব এলাকায় এখনও উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি, সতর্ক করা হয়েছে “একটা ব্যাগে দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে তৈরি থাকুন। নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে যেন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন।”
বহু বাড়ি এখনও উৎসবের আলোয় ঝলমল করছে। যদিও বাড়িগুলো খালি। বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন শিবিরে। তিনতলা বাড়ির ছাদ ছাড়িয়েছে ঢেউয়ের মাথা।
এগিয়ে এসেছে সমুদ্র। সজোরে এসে ধাক্কা মারছে বসার ঘরের বাইরের দেওয়ালে।
স্কটল্যান্ডেও একই ছবি। উপকূলবর্তী সল্টকোস্ট শহরে রেলপথটা সমুদ্রের একেবারে তীর ঘেঁষে। উত্তাল সমুদ্রের ধার দিয়েই এখনও কোনও মতে চলছে রেল পরিষেবা। কনকনে ঠান্ডা, সুবিশাল ঢেউ আর বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে দু’হাত দূরের জিনিসও দেখা দায়।
ইংল্যান্ডের পরিবেশমন্ত্রী ওয়েন পিটারসন বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছেই। উদ্ধারকাজ যাতে ঠিকমতো হয়, এ মুহূর্তে সে দিকেই জোর দিচ্ছি আমরা।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কথায়, “ভারী বৃষ্টি, উত্তাল সমুদ্র, বিশাল ঢেউ সব মিলিয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম উপকূলের ৫০টি এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ ও পরিবহণ মন্ত্রকের সঙ্গে টানা বৈঠক চলছে। যোগাযোগ রাখা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। আসন্ন ঝড়ের জন্য তারা যাতে প্রস্তুত থাকতে পারে। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ডেভন, কর্নওয়াল, ডরসেট, ওয়েলশ উপকূলের। বলছেন প্রধানমন্ত্রীই।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে আবহবিদ, কিংবা প্রশাসন, সকলেই এক মত গত সতেরো বছরে প্রকৃতির এ হেন রুদ্রমূর্তি দেখেনি ব্রিটেন।
|