পিসেমশাইকে মোটেও ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করাননি উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। বরং একপাল ক্ষুধার্ত হাউন্ডের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর কিমের চোখের সামনেই জাং সং থায়েককে খুবলে খেয়েছিল হাউন্ডের দল। প্রথমে এক চিনা সংবাদপত্র এই ‘নির্মম শাস্তির’ খবর জানিয়েছিল। সম্প্রতি সেই খবরই সিঙ্গাপুরের এক সংবাদপত্রে ফের ছাপা হয়েছে।
এমনিতে, উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির খবর বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছয় না। এমনকী, জাং সং থায়েকের মৃত্যু যে ফায়ারিং স্কোয়াডের হাতেই হয়েছে, সে নিয়েও সরকারি ভাবে কিছু জানা যায়নি। ফলে খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। সে সন্দেহই উস্কে দিয়েছে এই কাহিনি। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ১২ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় হাউন্ডের খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয় জাং সং থায়েককে। খাঁচার ভিতরে তখন তাঁর অপেক্ষায় ১২০টি বুভুক্ষু হাউন্ড। জাং-কে খাঁচায় ঢোকানোর পরমুহূর্তেই ছুটে আসে তারা। আচড়ে-কামড়ে-খুবলে রক্তাক্ত করতে থাকে। তবে বেশিক্ষণ নয়। জাং-কে শেষ করতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লেগেছিল তাদের। একই পরিণতি হয়েছিল জাংয়ের পাঁচ শাগরেদেরও। উল্লেখ্য, ‘কুয়ান জিউ’ নামে গোটা প্রক্রিয়াটিই তিনশো আমলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন কিম জং উন। অন্তত তেমনই দাবি চিন এবং সিঙ্গাপুরের ওই দুই সংবাদপত্রের।
কিন্তু এর বিপরীত ব্যাখ্যাও রয়েছে। যেমন উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে জাং বরাবরই চিন-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্বাভাবিক নিয়মেই ‘বন্ধুর’ মৃত্যুর পর চিনা সংবাদপত্র কিম জং উনকে নৃশংস প্রশাসক হিসেবেই তুলে ধরতে চাইবে। কিম-সমর্থকদের আরও প্রশ্ন, যদি এই নিষ্ঠুরতাই সত্যি হবে, তা হলে এত দিন বাদে হঠাৎ এই খবর নিয়ে মাতামাতি কেন? তা ছাড়া, ইতিহাস বলছে, রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য উত্তর কোরিয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডের ব্যবহারই প্রচলিত। জাংয়ের ক্ষেত্রে এই প্রথা ভাঙা হয়েছিল, এমন কোনও অকাট্য প্রমাণ এখনও মেলেনি।
কিন্তু এটাও সত্যি, কিম জং উনের নিষ্ঠুরতার কাহিনি মাঝেমধ্যেই আলোড়ন ছড়িয়েছে। তার সত্যাসত্য অবশ্য জানার উপায় নেই। কারণ দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে বরাবরই উত্তর কোরিয়া সরকার নীরব। কিন্তু তা-ও এই ভয়াবহ শাস্তির কথা বিশ্বাস করছেন অনেকে। আর সেই বিশ্বাসে মদত দিয়েছেন কিম জন উং স্বয়ং। দেশবাসীর উদ্দেশে সম্প্রতি তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাতে বলেন, “দলের ঐক্যের পক্ষে বিপজ্জনক নোংরাগুলোকে বার করে দেওয়া হয়েছে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জাং-এর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছিলেন কিম, তার সবকটিই ছিল শাসক দলের আদর্শের পরিপন্থী। এর জেরেই উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের নজরে জাং ‘কুকুরের থেকেও অধম’ হয়ে ওঠেন।
এমন চরিত্রকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে পাঠিয়ে সহজ মৃত্যু দেওয়ার বান্দা নন কিম। অন্তত তেমনই ধারণা বিরোধীদের। অতএব নিষ্ঠুরতার এই নয়া কাহিনিতেই বিশ্বাস করছেন তাঁরা। |