মিজোরামে কাজে গিয়ে জঙ্গিদের হাতে অপহৃত বাঁকুড়ার ইন্দাসের যুবক দীপ মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে পথে নামলেন তাঁর পরিবার, বন্ধু, কলেজের শিক্ষক থেকে স্থানীয় মানুষজন। প্ল্যাকার্ড হাতে বৃহস্পতিবার তাঁরা মিছিল করে ইন্দাসের বিডিও ও থানার ওসি-কে স্মারকলিপি দিলেন। পরে কিছুক্ষণের জন্য থানার সামনে ইন্দাস-রসুলপুর রাস্তাও অবরোধ করেন তাঁরা। তবে এই দাবি নতুন নয়। দিন কয়েক আগেও একই দাবিতে পথে নেমেছিলেন দীপের আত্মীয়-বন্ধুরা।
ইন্দাসের দিবাকরবাটির ২৫ বছরের যুবক দীপ মণ্ডল মিজোরামের মামিত জেলায় মোবাইলের টাওয়ার সারাতে গিয়ে অপহৃত হন। তিনি দিল্লির বেসরকারি একটি মোবাইল সংস্থার কর্মী। দীপের সঙ্গেই অপহরণ করা হয় আরও দু’জনকে। মিজোরাম পুলিশের ধারণা, ব্রু বা রিয়াং জঙ্গিরা তাঁদের অপহরণ করেছে। পরে টেলিকম নেটওয়ার্ক সলিউশন নামে ওই সংস্থার কাছে মুক্তিপণ বাবদ পাঁচ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল।
দীপের পরিবার ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর মুক্তির আবেদন জানায়। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর মিজোরাম পুলিশের সাহায্য চায়। দীপের ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয় মিজোরাম সরকারের অধীনে কিছু দিন কাজ করা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সচিব লাইমা চোজাকে। এ দিন তিনি বলেন, “দীপকে উদ্ধারের জন্য মিজোরামের মুখ্যসচিব, ডিজি-কে অনুরোধ জানিয়েছি। তাঁরা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা দীপদের বাংলাদেশের কোথাও আটকে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।”
দীপের সহপাঠী থেকে কলেজ শিক্ষক, এলাকাবাসীরা অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ‘আরও সক্রিয়তা’ দাবি করছেন। মিছিলে ছিলেন দীপের বোন মধুমন্তী। তিনি বলেন, “দাদা দুর্গাপুজোর আগে ওই সংস্থায় কাজে ঢুকেছিল। ভাইফোঁটা নিয়ে গুয়াহাটি গেল। বলেছিল, তাড়াতাড়ি ফিরবে। কিন্তু জঙ্গিরা মুক্তিপণ চাওয়ার পরেও পুলিশ বা প্রশাসন কেন ওকে ছাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছে না?” তিনি জানান, ১৭ ডিসেম্বর জঙ্গিদের ডেরা থেকে দীপ মিনিটখানেকের জন্য বাবা নিখিল মণ্ডলের মোবাইলে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘পাহাড়ি জায়গায় রেখেছে জঙ্গিরা। ভাল ব্যবহার করছে। সব্জি-ফল খেতে দিচ্ছে। গায়ে খুব ব্যথা।” দীপের বাবা বলেন, “প্রশাসন আরও সক্রিয় হলেই ওকে ফেরত পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
মিছিলে ইন্দাসের বাসিন্দা মানস রায়, বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “রাজ্য কেন কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহায্য নিচ্ছে না?” এলাকাবাসীর সংযোজন, “প্রশাসন সক্রিয় না হলে দীপের জন্য আরও বড় আন্দোলনে নামব।” ইন্দাসের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দীপকে উদ্ধারের ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারা আগেও স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। এ দিন আবার দাবি জানালেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “মিজোরাম পুলিশের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। দীপকে ফিরিয়ে আনার জন্য সবাই মিলে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি।” |