ডায়মন্ড হারবারের হুগলি নদী লাগোয়া মহকুমাশাসকের অফিসের কাছে রয়েছে এই জেলার অন্যতম ডায়মন্ড হারবার স্টেডিয়ামটি। ওই স্টেডিয়াম-সহ মাঠ পরিচালনার জন্য ১৯৫৫ সালে তৈরি হয় মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘ। বর্তমানে তার প্রায় ৩০০ সদস্য রয়েছে। দীর্ঘ দিন ক্রীড়া সঙ্ঘের পরিচালনায় এলাকার খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষকের সাহায্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে জেলা স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের নির্দেশে স্বশাসিত মহকুমা জেলা ক্রীড়া সঙ্ঘের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই দানা বেঁধেছে নানা সমস্যা।
উচ্চ আদালতে যাওয়া হলে আদালত অবশ্য কমিটি রাখার পক্ষেই রায় দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার পর থেকে ঠিক ভাবে কমিটির কাজকর্ম চলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে বছর দেড়েক ধরে স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে প্রশিক্ষণেও।
বাধ্য হয়ে স্থানীয় কিছু ক্লাবের খেলোয়াড় মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘের উপর নির্ভর না করে নিজেদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে। জেলা স্তরে বিভিন্ন খেলোয়াড়দের যোগ দেওয়া নিয়েও জটিলতা হচ্ছে।
ক্রীড়া সঙ্ঘের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, পদাধিকার বলে ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক সঙ্ঘের সভাপতি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। সদস্যেরা জানান, মহকুমায় ডায়মন্ড হারবার-১, ২, ফলতা, মগরাহাট-১, ২, মন্দিরবাজার, কুলপি, মথুরাপুর-১, ২ ব্লক এলাকা থেকে বিভিন্ন জোনে ফুটবল প্রতিযোগিতা হত। ওই প্রতিযোগিতার জয়ী দলগুলি তারা মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘের পরিচালনায় মহকুমা স্তরে ফাইনাল খেলায় যোগদান করত। সেখানে যারা চ্যাম্পিয়ন হত, তাদের জেলা স্তরে পাঠানো হত। কিন্তু এখন কমিটি সে ভাবে না থাকায় প্রতিনিধিত্ব করারই কেউ নেই। ফলে এগুলির কোনওটাই করা যাচ্ছে না।
একই কারণে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল মাঠটি। বিদ্যুত্ সংযোগ থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই আলো জ্বলছে না মাঠে। একটি মাত্র পানীয় জলের নলকূপও বছরের বেশিরভাগ দিন খারাপ থাকে। শৌচাগারটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খেলোয়াড়দের পোশাক পরিবর্তনের ঘরটিরও বেহাল দশা। অথচ ওই মাঠে বছর দেড়েক আগেও মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘের পরিচালনায় ছেলেমেয়েদের ফুটবল, ক্রিকেট, খো-খো, অ্যাথলেটিক্স-সহ নানা খেলার প্রশিক্ষণ রমরমিয়ে চলত। জানা গেল, অনেক নামী খেলোয়াড়ও উঠে এসেছিল নানাসময়ে।
ওই মাঠে বর্তমানে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে স্থানীয় ন্যাশনাল অ্যাথলেটিক্স ক্লাব, টাউন ক্লাব, বীণাপানি অ্যাকাডেমি এবং শিক্ষার্থী সঙ্ঘ। আর ওই ক্লাব বা সঙ্ঘের প্রশিক্ষকেরা কেউ অ্যাথলেটিক্স, কেউ ফুটবল, কেউ বা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। শিক্ষার্থী সঙ্ঘের এক প্রশিক্ষক গোপাল ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘের পক্ষে আদালত রায় দিলেও বর্তমান কার্যকরী কমিটি সে ভাবে উদ্যোগী না হওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। অথচ এখান থেকে অনেকেই খেলার জগতে নাম করে রাজ্য পুলিশ, কলকাতা পুলিশে চাকরি পেয়েছে।”
তবে সমস্যার কথা মানতে চাননি সঙ্ঘের সম্পাদক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “২০১২ সালের ২১ মে আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেওয়ার পরে খেলাধূলোর প্রতি যত্ন নেওয়া হয়েছে। কেবল মাত্র লিগ পর্যায়ের খেলাটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে সভা ডেকে ফুটবল লিগ চালু করার উদ্যোগ নেব। মাঠের ছোটখাটো সমস্যাগুলি নিজেরাই চাঁদা তুলে সমাধান করি। সরকারি টাকা আমরা সরাসরি ব্যবহার করার সুযোগ পাই না। ছোটখাটো সমস্যা সমাধানের জন্য পুরসভা বা ঠিকাদারদের কাছে আমরা আবেদন করি।”
বেহাল পরিকাঠামো বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক দীপক হালদারের বক্তব্য, “আমার তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা মাঠের সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকাটা ফিরে এসেছে।” ডায়মন্ড হারবারের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক তথা মহকুমা ক্রীড়া সঙ্ঘের সভাপতি মৌমিতা সাহা বলেন, ‘ওই মাঠটি সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। জেলা থেকে অনুমোদন পেলে ব্যবস্থা হবে।” |