আর তো বাকি ছয় |
আসলে তিন। তিন মাসেই ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রাথমিক এক্স-রে রিপোর্ট বেরিয়ে যাবে। লিখছেন অর্জুন ভৌমিক। |
নতুন বছরের মাত্র তিন দিন হয়েছে। কিন্তু পয়লা জানুয়ারি সকাল থেকেই অনেকের মাথায় একটাই ভাবনা আর তো মাত্র ১৬০ দিন। তার পরই শুরু হচ্ছে সেই টুর্নামেন্ট, যার জন্য কোটি কোটি মানুষ চার বছর অপেক্ষা করে থাকে। আর এ বার তো ওয়ার্ল্ড কাপ ব্রাজিলে। বাঙালিকে আর পায় কে! যদিও প্রচুর রাত জাগতে হবে, বসের ধ্যাতানি শুনতে হবে, কিন্তু তাতে কী! নেইমারের একটা পাস, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর একটা দৌড় যে কোনও রাগ, দুঃখ, অভিমান ভুলিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বিশ্বকাপ শুরুর আগের তিন মাস সব চেয়ে ক্রুশিয়াল। কোন টিম কেমন খেলবে, ঠিক ওয়ার্ল্ড কাপের আগে কে ‘পিক’ করছে, নতুন ট্রেন্ড ওয়ার্ল্ড ফুটবলের সব কিছু জানতে পারবেন আগামী তিন মাসে।
কী সেই ট্রেন্ড? পড়তে থাকুন... |
|
বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাচ মিস করবেন না |
এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবল কাঁপাচ্ছেকিন্তু পেপ গুয়ার্দিওলার বায়ার্ন মিউনিখ। ওই টিমের দুই ফুটবলার রিবেরি আর মুলার তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ফর্মে। দু’জনেই কিন্তু তাঁদের জাতীয় টিমের স্তম্ভ। রিবেরি ভাল খেললে ফ্রান্স ভাল খেলবে। মুলার তো জার্মান টিমের স্তম্ভ। ওয়ার্ল্ড কাপে যে এ
বারে জার্মানিকে অনেকেই ফেভারিট বলছে, তারও প্রধান কারণ জার্মান ফুটবলকে নিয়ে হঠাৎ করে একটা ‘বাজ’ তৈরি করে ফেলেছে এই বায়ার্ন মিউনিখ টিম। তাই যাই করুন না কেন, যতই ঘুম পাক, বায়ার্ন মিউনিখের খেলা কিন্তু মিস করবেন না। |
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে লক্ষ রাখুন |
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের দিন কুড়ির মধ্যেই ওয়ার্ল্ড কাপ শুরু। তাই এ বারের ওয়ার্ল্ড কাপের পুরো ট্রেন্ডটাই বুঝে নেওয়া যাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ দিকে কোন ক্লাব কেমন খেলছে সেটা দেখলে।
যেমন ধরুন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের রুনির ফর্ম দেখলেই বুঝে যাবেন ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড লাইন কেমন খেলবে। তেমনই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির খেলা দেখলেই আর্জেন্টিনীয় টিম তার ভাগ্য বলতে পারবে কারণ আর্জেন্টিনীয় টিমের পাবলো জাবাইয়েতা আর আগুয়েরো ওই টিমে খেলে।
তেমনই স্পেনের ফর্ম দেখতে হলে আপনাকে বার্সেলোনার ম্যাচগুলো দেখতেই হবে। অন্য দিকে মেসুট ওজিলের ফর্ম জানতে আর্সেনালের ম্যাচ দেখা মাস্ট। আর যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে কনসেপ্টে খেলা হয়, তাই কোনও প্লেয়ার বা টিমের ফর্ম জানতে হলে এটাই সেরা টুর্নামেন্ট। |
মাতাতে পারেন |
• নেইমার •
ওজিল • জাভি/ইনিয়েস্তা
• রোনাল্ডো •
রিবেরি |
(ঠিকই দেখেছেন, মেসি নেই লিস্টে) |
|
‘তিকি তাকা’ দিয়ে কিন্তু আর চলবে না স্পেনের |
গত বেশ কয়েক বছর বিশ্ব ফুটবলে রাজ করছে স্পেন। এখানে একটা কথা বলি। সেই সাফল্যের পিছনে বিরাট ভূমিকা ছিল স্পেনের সেই বিখ্যাত তিকি তাকা ফুটবলের। কিন্তু অনেকেই যেটা ভুলে যান, এই ‘তিকি তাকা’-কে সব চেয়ে ভাল ভাবে যিনি ব্যবহার করতে পেরেছিলেন, তাঁর নাম পেপ গুয়ার্দিওলা। তখন উনি বার্সেলোনার কোচ ছিলেন। কিন্তু আজকে যখন উনি বায়ার্নের কোচ তখন কিন্তু আর ‘তিকি তাকা’র ধার ধারছেন না। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাচ্ছেন ওঁর টিমকে, তার কারণ ‘তিকি তাকা’র অভিনবত্ব আর নেই। বাকি টিমগুলোও এই সিস্টেম কাউন্টার করার প্ল্যান জেনে ফেলেছে। তাই যে সিস্টেম স্পেনকে এত দিন এত সাফল্য এনে দিয়েছিল, সেই সিস্টেমে খেললে কিন্তু স্পেনের এ বার ঘোর বিপদ। |
মেসি কিন্তু বিশ্বকাপ জিতছে না |
|
জানি অনেকেই রেগে যাবেন, লেখাটাও পড়া বন্ধ করে দিতে পারেন সাব হেডটা পড়ে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, পুরো ফুটবল দুনিয়াতে কিন্তু এটাই সব চেয়ে বড় খবর।তার অনেকগুলো কারণ। প্রথমেই বলি ওঁর চোটের কথা। গত কয়েক মাসের চোটের জন্য বেশির ভাগ সময়টাই বাইরে বসে ছিলেন মেসি। পুরনো ফর্মে ফিরতে ওঁর কাছে আর তেমন সময় নেই।দ্বিতীয়ত, স্পেনে কিন্তু ওঁকে নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। তার কারণ কোচের কথা না শোনা। স্পেনে এখন একটাই আলোচ্য বিষয়। মেসি কেন ডায়েট মানছেন না? বার্সেলোনার সবাই জানে মেসি কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে খুব ভালবাসেন।
কিন্তু ওঁর এই ডায়েটটা পুরো নিয়ন্ত্রণে রাখছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা। এই নিয়ে মেসির সঙ্গে বহু বার অশান্তিও হয়েছে পেপের। কিন্তু বার্সেলোনার নতুন কোচের কথা আর কিছুতেই শুনছেন
না মেসি। আর যেহেতু ছোটবেলা থেকেই ওঁর হর্মোনাল গ্রোথ ডিসঅর্ডারের সমস্যা আছে, ডায়েট না মানলেই উনি ‘ইনজুরি প্রোন’ হয়ে ওঠেন। যেটা এ বারও হয়েছে। এই রকম ফর্মে আর যাই হোক ওয়ার্ল্ড কাপটা জেতা যায় না। আর তা ছাড়া আর্জেন্টিনার ডিফেন্স বড্ড উইক। ওই টিম নিয়ে বিশ্বকাপ জিতলে সেটা মির্যাকল ছাড়া আর কিছু নয়।
আর এ বারে আর্জেন্টিনার ওয়ার্ল্ড কাপ ম্যাচগুলোতেই ট্রিমেন্ডাস ‘বুউউ’ করা হবে। তার কারণ ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা মানে আমাদের ভারত-পাকিস্তান। তাই আর্জেন্টিনার খেলা থাকলে ব্রাজিলীয়রা ‘বুউউ’ করবেই করবে। ওই প্রেশারটা এই আর্জেন্টিনা টিম নিতে পারবে বলে মনে হয় না। |
বাঙালিদের বদভ্যাসটা এ বার ছাড়তে হবে |
দু’জন ফুটবলার। দু’জনই কিংবদন্তি। বিশ্ব ফুটবলে আবার কবে এই রকম প্লেয়ার আসবে কে জানে? একজনকে তো লোকে পর্তুগালের ওয়ান ম্যান আর্মি বলে। অন্য জন এমন কিছু ম্যাচ খেলেছেন, এমন কিছু গোল করেছেন, যে যত দিন ফুটবল থাকবে, তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা হবেই। দু’জনেই আধুনিক ফুটবলের কিংবদন্তি। একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, অন্য জন মেসি। কিন্তু আমাদের বাঙালিদের একটা বদ অভ্যাস আছেই। আমরা সব কিছুর বিচার করি ওয়ার্ল্ড কাপ জেতা দিয়ে।
আর এই ২০১৪-র পৃথিবীতে আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতেই হবে। আজকের ফুটবলারদের কাছে কিন্তু দেশের জন্য খেলাটাই আর সব চেয়ে বড় ব্যাপার নয়। আজ কিন্তু ক্লাবের হয়ে খেলাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাব প্লেয়ারকে টাকা দেয়। গোটা ব্যাপারটাই এখন পেশাদারি। খেলায় ব্যক্তিগত রোম্যান্টিসিজমের সেই যুগ আর নেই। মূল্যায়নের সংজ্ঞাটাও তাই পাল্টে গিয়েছে।
আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কী লা লিগা কী ইপিএল-য়ে সেরা হওয়াটা অনেক সময়ই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের কাছে।
মেসি আর রোনাল্ডো যতই ভাল খেলুন, রক কী চায়ের দোকানে সব শেষে একটা কথাই শুনতে পাবেন, “ধুর, এখনও ওয়ার্ল্ড কাপ তো জেতেনি!” হ্যাঁ, জেতেনি। ঠিকই বলছেন আপনারা। কিন্তু তাই বলে কি তাঁদের গ্রেটেস্ট গণ্য করা হবে না?
মনে রাখবেন বিশ্বকাপ কিন্তু সাতটা ম্যাচের ব্যাপার। আর ক্লাব ফুটবলে খেলতে হয় ৪০ থেকে ৫০ ম্যাচ। ওয়ার্ল্ড কাপের ছ’মাস আগে আমি এই প্রশ্নটাই করলাম। পারলে প্লিজ ভাববেন এই বিষয়টা নিয়ে।
|
সেরা কোচ হতে পারেন |
আমার বাবার, আপনাদের প্রিয় সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে এই নিয়ে আমার মতের মিল হবে না জানি। আমার মনে হয় এই ওয়ার্ল্ড কাপ-য়েও সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোচ যিনি হতে পারেন, তিনি ‘বিগ ফিল’, মানে ফিলিপ স্কোলারি। এ বারে ঘরের মাঠে খেলা। স্কোলারির অবস্থাটা একেবারে ২০১১ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ-য়ের গ্যারি কার্স্টেনের মতো। কিন্তু কেউ যদি ব্রাজিলকে এ বার ওয়ার্ল্ড কাপ জেতাতে পারে, সেটা স্কোলারি। বাবার ফেভারিট কোচ
কিন্তু স্কোলারি নয়। অবশ্য বাবার যিনি ফেভারিট কোচ, তিনি কোনও জাতীয় দলের কোচ নন। তিনি ক্লাব টিমের কোচিং করান এবং তাঁর নাম হোসে মোরিনহো। |
|
|