ব্যাটারি বিকল হয়ে যাওয়ায়, বছর দেড়েক ধরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে খয়েরবাড়ির বাঘ পুর্নবাসন কেন্দ্রে। কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গাড়িতে চেপে বাঘ দেখার সুযোগও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে পর্যটকদের। আর তার জেরেই পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। বুধবার, বছরের প্রথম দিন খয়েরবাড়িতে পর্যটকের সংখ্যা দেখে উদ্বেগে বনকর্মীরা।
বনকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, উদাসীনতার কারণেই বেহাল হয়ে পড়া ডুয়ার্সের খয়েরবাড়ি ও কুঞ্জনগরে নতুন বছরের প্রথম দিনে পর্যটকদের পরিচিত ভিড় দেখা গেল না ওই দুই কেন্দ্রে। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত বছরের পয়লা জানুয়ারিতে যে ভিড় হয়েছিল এ বছর ভিড়ের পরিমাণ ছিল তার অর্ধেক। উল্টে বছরের প্রথম দিন খয়েরবাড়ি এবং কুঞ্জনগর নিয়ে পর্যটকদের নানান কটূক্তি মুখ বুজে শুনতেও হয়েছে বনকর্মীদের। বন দফতরের অফিসারদের একাংশ কোনও রাখঢাক না করে পরিকাঠামোগত খামতির কথা সরাসরি জানিছেন জলদাপাড়া দক্ষিণের রেঞ্জ অফিসার জয়দেব রায়। তিনি বলেন, “নতুনত্ব কিছু না থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ কমবে। স্বাভাবিক ভাবেই তাই হয়েছে। আয় ক্রমশ কমের আসার বিষয়টি কর্তাদের বলা হয়েছে।” |
কুঞ্জনগরে বন্ধ পড়ে দোলনা সেতু।
বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
গত বছর কুঞ্জনগর পর্যটন কেন্দ্র ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নববর্ষের দিন আয় করা হলেও এবার সে পরিমাণ অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। সদ্য বন দফতরের দায়িত্ব প্রাপ্ত রাজ্যের বন মন্ত্রী বিনয় বর্মণ অবশ্য বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন পর্যটনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পর্যটনকেন্দ্রগুলির হাল ফেরাতে বনকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যা করার করব।”
রাজ্যের প্রাক্তন বন মন্ত্রী যোগেশ বর্মনের উদ্যোগে ফালাকাটা লাগোয়া খয়েরবাড়ি বাঘ পুনর্বাসন কেন্দ্র ও কুঞ্জনগর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। দেড় দশক আগে কুঞ্জনগর পর্যটন কেন্দ্র উদ্বোধন হবার পর অসম ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা ভিড় করতে শুরু করেন। একই ভাবে ২০০৩ সালে খয়েরবাড়ি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পরেও পর্যটকদের ভিড় সেখানেও উপচে পড়তে থাকে। যোগেশবাবুর কথায়, “আমি অনেক দিন দু জায়গায় যাই না। তবে বাসিন্দাদের মুখে বেহাল পরিস্থিতির কথা শুনে মন খারাপ লাগে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে বন দফতরের আয় বাড়বে। এটা ভাবা উচিত নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে আমি নিজে দুই জায়গা নিয়ে কথা বলব।”
প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে কৃত্রিম বনে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে চেপে চিতাবাঘেদের অবাধ বিচরণ করতে দেখার সুযোগ মিলত। লোহার জাল দিয়ে ঘেরা এনক্লোজারের ভিতরে জলাশয়ে চিতা বাঘের জল খাওয়া, একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি করা থেকে একেবারে পর্যটকদের ভ্রমণের গাড়ির সামনে চলে আসার মত রোমহর্ষক দৃশ্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসতেন বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। গত দেড় বছর ধরে খারাপ হয়ে থাকা গাড়িটি মেরামতি না করায় এনক্লোজারের ভেতর আর পর্যটকরা যেতে পারছেন না। খাঁচা বন্দি পাঁচটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও সাতটি চিতা বাঘ দূর থেকে দেখে মন ভরাতে হচ্ছে পর্যটকদের।
কুঞ্জনগর পার্কেও বেহাল অবস্থা বলে অভিযোগ। কুঞ্জনগর পর্যটন কেন্দ্রের ভেতর বুড়ি তোর্সা নদীর উপর দোলনা সেতুটির দেখভাল ঠিক মত না করায় সেতুর কাঠের পাটাতন খুলে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেতুতে পর্যটকদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পর্যটন মরসুমে বাচ্চাদের হাতির পিঠে চাপিয়ে পার্ক ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা একসময় থাকলেও তা দেড় বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছে বন কর্তারা।
অসমের ধুবরির বাসিন্দা সনাতন মোহন্ত বলেন, “অনেক কিছু শুনে এখানে এসেছিলাম। এসে দেখলাম যা শুনেছি, তার কিছুই নেই।”
|