দুপুর সাড়ে ১২টা। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের সামনের মাঠের এক প্রান্তে তৈরি রঙিন সামিয়ানার মাঝখানে রাখা লম্বা সোফার এক কিনারে বসে রয়েছেন পুলিশ কমিশনার। পাশে ডেপুটি কমিশনার, তিনজন অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিপি-রা, এবং বিভিন্ন থানার ওসি, আইসিরা। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের তাবড় পুলিশ কর্তা, অফিসারের সামিয়ানার নিচে, পেছনে তখন চা-জলখাবারের আয়োজন করতে অফিসার-কনস্টেবলদের চূড়ান্ত ব্যস্ততা চলছে। হঠাৎই মাইকে ভেসে আসা গানের কলি শুনে থমকে গেল ব্যস্ততা। গলাটা চিনতে পেরে কৌতুহলে সামিয়ানার সামনে এসে চমকে উঠলেন তাঁরা। মাইক হাতে গান গাইছেন খোদ পুলিশ কমিশনার।
ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে অফিসারদের ডেকে ‘আড্ডার’ উদ্যোক্তা শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন নিজেই। সহকর্মীদের সঙ্গে ‘আড্ডা’ যাতে কোনভাবেই ‘অফিসিয়াল’ না হয়ে যায়, সে কারণে সকলকেই সাধারণ পোশাকে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন কমিশনার। সকাল থেকেই সামিয়ানার সামনে রাখা মাইকে গান বাজছিল। দুপুর সওয়া বারোটা নাগাদ কমিশনার পৌঁছনোর পরে গান বন্ধ হয়ে যায়।
মাঠে এসে সোফায় বসলেন কমিশনার। মাইক হাতে সঞ্চালককে ডেকে তিনি প্রস্তাব করলেন, “রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে আড্ডার শুরু হোক।” কিন্তু গান গাইবে কে? ঘরোয়া আড্ডায় গান গাওয়ার সুনাম রয়েছে, এমন কয়েকজন অফিসারের নাম ডাকলেন সঞ্চালক। যদিও কেউ-ই কমিশনারের পাশে এসে মাইক হাতে নিতে রাজি নন। বেশ কিছুক্ষণ এমন চলার পরে কমিশনার জগমোহন-ই উঠে দাঁড়িয়ে মাইক নিয়ে বললেন, “রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারি না। তাই অন্য কিছু চেষ্টা করি।” নীল রঙের স্যুট-টাই পরে কমিশনার গাইলেন কিশোরকুমারের সেই গান, “সামা হ্যায় সুহানা সুহানা.....”
কমিশনার গাইছেন আর সেই সঙ্গে হাততালি দিয়ে সঙ্গত করছেন অন্য অফিসারেরা। গানের শেষে প্রবল করতালি। অত্যুৎসাহী একজন শিসও দিয়ে ফেললেন। তার পরে কমিশনারের নির্দেশেই ডাকা হল অফিসারদের। নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির ওসি নব্যেন্দু সরকার গাইলেন, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।’ ভক্তিনগরের ওসি ট্রাফিক দীপাঞ্জন দাস গাইলেন, ‘আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে....’। এসিপি অরিজিৎ গোস্বামী গাইলেন, ‘পুরানো সেই দিনের কথা...’। পুলিশ অভিযোগ সেলের ওসি দীপঙ্কর সোম শোনালেন চার্লি চ্যাপলিনের কথা। বললেন, “চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, আমি বৃষ্টিতে পথ চলতে খুব পছন্দ করি, যাতে আমার চোখের জল কেউ না দেখতে পায়। আর পুলিশেও যত চাপ-সমস্যাই থাক, সাধারণ বাসিন্দাদের সামনে হাসিমুখ নিয়ে যেতেই হবে।” ঘাড় ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানান কমিশনারও।
আড্ডার আসরে ছিল হাসি-ঠাট্টাও। মাটিগাড়ার ওসি সঞ্জয় ঘোষ গান বা কবিতার বদলে শুধু সকলকে, “হ্যাপি নিউ ইয়ার” বলেই মাইক ছেড়ে দিতে চাইলে কমিশনার বলেন, “পরের আড্ডার মধ্যে আপনাকে গান শিখে আসতে হবে। না হলে কিন্তু শাস্তি হবে।” হেসে ওঠেন সকলেই।
আড্ডার শেষে কমিশনার বললেন, “আমরা সব সময়ে কাজের মধ্যে থাকি। কিন্তু নিজেদের জন্য সময় বের করাটাও খুবই প্রয়োজনীয়।” তাঁর কথায়, “টিম ওয়ার্ক বাড়াতে পেশাদারি সংস্থাগুলি নিজেদের মধ্যে আড্ডার আয়োজন করে, আমরাই তাই করেছি। এর পরে আরও বড় মাপের আড্ডা হবে।” আড্ডার শেষে কেক-প্যাটিস এবং জিলিপি দিয়ে সকলকে মিষ্টিমুখ করান কমিশনার। |