দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশ থেকেই লোকসভা ভোটের প্রচারের মহড়া শুরু করে দিল তৃণমূল। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশে। তার আগে বুধবার দলের ১৬তম প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল সেবাদল আয়োজিত কেন্দ্রীয় সমাবেশ তো বটেই, রাজ্যের অন্যত্রও তৃণমূল নেতারা কার্যত লোকসভা ভোটের প্রচারের প্রস্তুতি-পর্বই সেরে নিয়েছেন।
তবে ব্রিগেড ও লোকসভার প্রস্তুতির মধ্যেই প্রতিষ্ঠা দিবসে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ এবং অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি একেবারে এড়াতে পারেনি শাসক দল। কিছু জেলায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বিশৃঙ্খল ঘটনার অভিযোগ এসেছে। ঘটনা বিক্ষিপ্ত বলে দাবি করেও প্রাথমিক ভাবে এমন খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও মারধরের অভিযোগ তুলে জামবনির চিচিড়া এলাকায় তিন ঘণ্টা মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়েছে। হুগলির গোঘাটে দুই গোষ্ঠীর মারপিটে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আট জন। বিজেপি সমর্থকদের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। দুর্গাপুরেও তৃণমূল কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠা দিবসের পতাকা তোলা নিয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়েছে দুই গোষ্ঠী।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য বলেছেন, “রাজ্যে ৩৪১টি ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও পাড়ায় পতাকা তোলা হয়েছে। সামান্য দু’একটি ঘটনা ঘটেছে। বিছিন্ন ঘটনা। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি শৃঙ্খলা ভেঙে থাকে, তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের পতাকা উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুকুলবাবুই। ময়দানের সমাবেশে এ দিন দলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল সেবা দলের রাজ্য সভাপতি অলক দাস প্রমুখ লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূলের গুরুত্ব বৃদ্ধির বার্তা দিয়ে রেখেছেন। দিল্লিতে সরকার গড়তে তারা যে নির্ণায়ক শক্তি হবে, এটাই এখন তৃণমূলের প্রচারের মূল সুর। এক ধাপ এগিয়ে এ দিন সুব্রতবাবু বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে দিল্লিতে সরকার হলে দেশের একটা মানুষও অন্নহীন, বস্ত্রহীন থাকবে না!” তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তিনি দলীয় কর্মীদের সংগঠনকে মজবুত করতে এবং মানুষের মধ্যে নিবিড় প্রচার চালাতে বলেছেন। অন্য দিকে, সিপিএমকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে মদনবাবু বলেছেন, “সরকারে এসে আমাদের নেত্রী একটি কথাই বলেছিলেন, ‘বদলা নয়, বদল চাই।’ সিপিএম নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখ, নেত্রীর ওই বক্তব্যের জন্যেই তোমরা আক্রান্ত হওনি!” তবে দল ক্ষমতায় থাকলে ‘বেনো জল’ ঢোকে জানিয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকতেও বলেছেন তিনি।
এ সবের মধ্যেই তৃণমূলের পক্ষে ঈষৎ বিড়ম্বনার কারণ হয়েছে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াবেড়া ব্লক তৃণমূলের তপসিয়া অঞ্চল কমিটির সহ-সভাপতি নিরঞ্জন দাসের দলবল নিয়মিত জাতীয় সড়কে লরি থেকে তোলা তোলে, এই অভিযোগে দলেরই দু’টি গোষ্ঠীর ঝামেলা চলছিল। তারই পরিণতিতে এ দিন মারধর এবং অন্য গোষ্ঠীর তরফে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। হুগলির গোঘাট পশ্চিমপাড়ায় আতাউল হক নামে এক নেতার অনুগামীরা সাইকেল-মিছিলের সময় যুব নেতা ফরিদ খানের লোকজনের মারপিটে লাঠি-কুড়ুল-টাঙির আঘাতে দুই গোষ্ঠীর ৮ জন জখম হয়েছেন।
এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আতাউল অবশ্য দাবি করেছেন, “সিপিএমের লোকেরা কুড়ুল-টাঙ্গি নিয়ে আমাদের মিছিলের শেষে হামলা করেছিল। আমাদের লোকেরা প্রতিবাদ করেছে।”
গোঘাটেরই রতনপুরে বিজেপি-সমর্থক পরিবারের কিছু কিশোর-কিশোরীর পিকনিকে তৃণমূলের হামলার অভিযোগ এসেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে আরামবাগ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকুমার সাঁতরার মেয়ে পূজাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য দাবি করছে, বচসা হলেও কাউকে মারধর করা হয়নি। সকালে দুর্গাপুরের ভ্যাম্বে কলোনির তৃণমূল কার্যালয়ে সকালে দলীয় পতাকা তোলেন ভীম মণ্ডল নামে এক তৃণমূল নেতা। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে আর এক নেতা নিখিল মুখোপাধ্যায় দলবল নিয়ে এসে ফের পতাকা তুলতে গেলে কয়েক জন বাধা দেন। নিখিলবাবুর অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে লাঠি নিয়ে চড়াও হন তাঁরা। মারে এক জনের মাথা ফাটে, তিনি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালেও দু’পক্ষের বচসা বেধেছিল, পুলিশ গিয়ে তাদের
হটিয়ে দেয়। |