এ সব চলবে না, বলেছিলেন বাড়িওয়ালি
তুন পাড়ায় প্রথম প্রথম এসে আবার স্কুলে ভর্তি হবে বলে প্রতিবেশী এক মহিলার কাছে পড়া শুরু করেছিল ১৬ বছরের মেয়েটা। পাড়ায়-দোকানে মাঝেমাঝে যাতায়াতও করত সে।
কিন্তু ছবিটা বদলে গেল মাস দুয়েক আগের ঘটনাটা জানাজানি হতেই। তার পর থেকে সারা দিন ঘরেই বসে থাকত সে। বিশেষ কথা বলত না। মাঝেমধ্যে নিজের মনে বিড়বিড় করত। কখনও হাঁটুতে মুখ গুঁজে থরথর করে কাঁপত। কারণ, তত দিনে শুরু হয়ে গিয়েছে অন্য চাপ মধ্যমগ্রামে ‘এ সব কাণ্ড’ করে এসে এ পাড়ায় আর থাকা চলবে না!
গায়ে আগুন দিয়ে সেই কিশোরীর মৃত্যুর পরের দিন কথাগুলো বলছিলেন পাড়ার লোকেদেরই কেউ কেউ। বিমানবন্দর লাগোয়া যশোহর রোড আড়াই নম্বর গেটের মতিলাল কলোনি। অক্টোবরে দু’দিন গণধর্ষিতা হওয়া মেয়েকে নিয়ে মাসখানেক আগে যে পাড়ায় উঠে এসেছিলেন গরিব ট্যাক্সিচালক বাবা-মা। ভাড়া নেন এই পাড়ার বেলা শীলের বাড়িতে।
মধ্যমগ্রামের ঘটনাটা কাগজে পড়েছিলেন নতুন পাড়ার অনেকেই। কিন্তু ওই পরিবারই ভাড়া এসেছে জানতেন না। বাড়িওয়ালি বেলাদেবীর আত্মীয় মিন্টা নামে এক যুবক পাড়ায় চাউর করে খবরটা। অভিযোগ, মধ্যমগ্রামে কিশোরীটিকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতার হওয়া ছোট্টুর ঘনিষ্ঠ মিন্টা।
খরর ছড়ানোর পর থেকেই পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছিল পরিবারটিকে তাড়ানোর তৎপরতা। এমনকী বেলাদেবী বুধবার বলেন, “ও যে মধ্যমগ্রামে এ সব কাণ্ড করে এসেছে, তা জানলে কি ভাড়া দিতাম! আমাদের আত্মীয় মিন্টা এসে সব জানানোর পরেই বাড়ি ছাড়ার জন্য ওঁদের এক মাস সময় দিয়েছিলাম। ওঁদের উঠে যাওয়ার জন্য পাড়ার লোকেরাও চাপ দিচ্ছিল।”
মতিলাল কলোনির ছবিটা শহরতলির আর পাঁচটা ঘিঞ্জি বসতি এলাকার মতোই। যশোহর রোড থেকে ভেতরটা ভাল করে চোখেই পড়ে না। ফুট পাঁচেক চওড়া রাস্তার দু’ধারে গায়ে গা লাগিয়ে এক-একটা বাড়ি। গলিতে ঢুকেই ডান হাতে চারটে বাড়ির পর ছোট একটা টালির বাড়ি। সামনের কালো গ্রিলে তালা দেওয়া। ডাকাডাকি করার পরে বেরিয়ে এলেন এক বৃদ্ধা। তিনিই বেলাদেবী। বললেন, “ঘটনার দিন মিন্টা আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তবে মিন্টা বা আমার ছেলে রতন কেউ মেয়েটির গায়ে আগুন দেয়নি। উল্টে আমার ছেলেই দরজা ভেঙে তাকে বার করে আনে।” রতন অবশ্য এখন জেল হেফাজতে।
বেলাদেবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই জড়ো হচ্ছিলেন কয়েক জন। হঠাৎ হাজির আরও কয়েক জন যুবক। তাঁদের প্রশ্ন, “আপনারা কারা?” সাংবাদিক পরিচয় দিতেই নির্দেশ এল, “পরিচয়পত্র দেখান।”
এই যুবকেরা কারা? রঞ্জন দাস নামে ওই দলের এক সদস্য বললেন, “আমরা স্থানীয় বিবেকানন্দ সঙ্ঘের সদস্য। এলাকায় কারা আসছে-যাচ্ছে, সেটা দেখছি। বহিরাগতরা ঢুকতে পারে বলে খবর রয়েছে।” মঙ্গলবার রাতে ওই কিশোরীর দেহ আরজি কর হাসপাতাল থেকে মতিলাল কলোনির ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শেষকৃত্যের আগে স্থানীয় রাজনৈতিক স্তরে কিছু গোলমালও হয়েছে। তার পর থেকেই এই পরিস্থিতি। বুধবারও গোলমালের আশঙ্কায় যশোহর রোডে বাহিনী মোতায়েন করেছিল পুলিশ।
তবে এ দিন সকালে মেয়ের দেহ নিয়ে শ্মশানে পৌঁছে বাবা জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে আর ফিরবেন না। বললেন, “পুলিশ যেন আমাদের মালপত্র ঘর থেকে বার করে এনে দিয়ে যায়।” পরিবারের অভিযোগ, মেয়েটি গায়ে আগুন দেওয়ার পরেও স্থানীয় কিছু যুবক তাঁদের উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। মঙ্গলবার রাতেও তাঁরা হাজির ছিলেন।
অবশেষে চাপেরই জয় হয়েছে। ‘এই কাণ্ড’ ঘটানো মেয়ের পরিবার সত্যি-সত্যিই পাড়া-ছাড়া হওয়ায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.