কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার পরে পথে নেমেছিলেন শঙ্খ ঘোষ-সহ বিশিষ্টজনেদের একটি বড় অংশ। ততটা বড় আকারে না-হলেও মধ্যমগ্রামের গণধর্ষিত ও মৃত কিশোরীর জন্য বুধবার, ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে বিশিষ্টজনেদের একাংশ ফের পথে নামলেন।
এ দিনের মিছিলে ছিলেন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, সুজাত ভদ্র, মীরাতুন নাহার-সহ বহু বিশিষ্টজন। মিছিলের পরে অপর্ণা বলেন, “এই ঘটনায় আমরা শোকস্তব্ধ। কিছু বলার নেই। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত।” মীরাতুন জানান, এই ঘটনাকে ধিক্কার জানাতে, পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে মৌনী মিছিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই রাজ্যে আর একটি প্রাণও যাতে এ ভাবে না-যায়, রাজ্য সরকার তা দেখুক।” |
মধ্যমগ্রাম ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত
বিশিষ্টজনেদের মিছিল। রয়েছেন অপর্ণা সেনও। বুধবার।— নিজস্ব চিত্র। |
এখানে থেকেই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন মৃতার ট্যাক্সিচালক বাবা। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এ দিনই স্ত্রীকে নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নায়ায়ণনের কাছে যান তিনি। রাজ্যপালের কাছে তাঁদের অভিযোগ, “পুলিশ আমাদের ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে। চাপ দিচ্ছে। বলছে, বিহারে চলে যাও। কী দোষ করেছি আমরা?” কিশোরীর মা রাজ্যপালকে বলেন, “দুষ্কৃতীরা তো একটানা হুমকি দিচ্ছিলই। এখন পুলিশও বলছে, ‘বেশি কিছু করলে গুলি করে দেব’।”
নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কথা শুনে কী বললেন রাজ্যপাল?
মেয়েটির বাবা বলেন, “রাজ্যপাল আমাদের বলেছেন, ‘আপনারা কোথাও যাবেন না। এটা হিন্দুস্থান। আপনাদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা হবে’।” আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ থেকে শুরু করে মঙ্গলবার সারা রাত তাঁদের মেয়ের দগ্ধ মৃতদেহ নিয়ে পুলিশের টানাহেঁচড়া সবই রাজ্যপালকে বিস্তারিত ভাবে জানান ওই দম্পতি। মেয়েটির বাবা বলেন, “রাজ্যপালকে বলেছি, দমদম থানার ওসি আমাকে হুমকি দিয়েছেন, কী ভাবে আমি এখানে ট্যাক্সি চালাই, তিনি তা দেখে নেবেন। এটা শুনে রাজ্যপাল বৈঠকে হাজির পদস্থ আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, ওই থানা কোন কমিশনারেটের অধীনে পড়ছে। পরে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন।” রাজ্যপালের আশ্বাস শুনে বিহারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করেছেন ওই দম্পতি। ট্যাক্সিচালক বলেন, “এখানেই থাকব। মেয়ে চলে গিয়েছে অসহায় ভাবে। ঘাতকদের শাস্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
মেয়েটির সঙ্গে যা ঘটেছে, তার পরেও আইন-প্রশাসনের উপরে আপনাদের আস্থা আছে? “মানুষের উপরে আমাদের আস্থা আছে,” বললেন কিশোরীর বাবা।
কিশোরীর মা-বাবার সঙ্গে এ দিন রাজভবনে গিয়েছিলেন সিপিএমের তিন নেতা সুধাংশু শীল, ভারতী মুৎসুদ্দি ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সুধাংশুবাবু পরে বলেন, “বাড়ির লোকের অনুমতি ছাড়া পুলিশ যে-ভাবে জোর করে কিশোরীর দেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে, আমি আগে কখনও তেমনটা দেখিনি। রাজ্যপালকে বিস্তারিত ভাবে সবই জানিয়েছি। সব শুনে রাজ্যপাল আশ্চর্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ রকম কী করে হয়!’ বৈঠকে হাজির অফিসারদেরও এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন রাজ্যপাল।”
পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশের সঙ্গে সঙ্গে এ দিন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা শিশু কল্যাণ কমিটির বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। এবং সেই অভিযোগ এনেছে খোদ রাজ্য মহিলা কমিশন। ওই কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “ধর্ষণের পরে মেয়েটির যখন চিকিৎসা চলছিল, আমরা তখনই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে খবর দিয়েছিলাম। কমিটি যদি মেয়েটিকে কোনও হোমে রাখার ব্যবস্থা করত, এমন পরিণতি না-ও ঘটতে পারত।”
কী বলছেন কমিটির কর্তারা?
কমিটির এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। উনি (সুনন্দাদেবী) যখন অভিযোগ করেছেন, তখন সেটা খতিয়ে দেখব।” |