পথে নেমে প্রতিবাদই পথ, মনে করছেন বাম নেতারা
ধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে শাসক দল ও পুলিশের ভূমিকাকে দায়ী করে নতুন বছরের প্রথম দিনই পথে নামল বামেরা। দলের ছাত্র, যুব ও শ্রমিক সংগঠনকে পথে নামিয়ে এক দিকে সিপিএম যেমন ওই ঘটনায় সহানুভূতির হাওয়া কুড়োনোর চেষ্টা করল, তেমনই লোকসভা ভোটের বছরে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার কাজও শুরু করা গেল। সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়া করার সুযোগ থাকলেও মধ্যমগ্রাম-কাণ্ডে এ বার গোড়া থেকেই সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করা গিয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
নির্যাতিতা কিশোরীর ট্যাক্সিচালক বাবার সঙ্গে সিটুর ইউনিয়নের হৃদ্যতা থাকায় ঘটনার পর থেকেই সিটু নেতারা ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে কিশোরী আর জি করে ভর্তির পরে সক্রিয়তা আরও বাড়িয়েছিলেন তাঁরা। দু’দিন আগেই কিশোরীর বাবাকে রাজ্যপালের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সিটু নেতৃত্ব। মৃত্যুর পরে কিশোরীর দেহ পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে বুধবার ফের তাঁকে নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন বাম নেতারা। মেয়ের মৃত্যুর বিচার, তাঁদের বাড়িতে শাসক দলের হুমকির অভিযোগ এ সব নিয়েই রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে ‘সুবিচার’ চেয়েছেন বাবা। অব্যবহিত পরে পথে নেমে সেই দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মনোজ ভট্টাচার্যেরা।
দলের অন্দরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রায়শই বলছেন, শুধু তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ করে গেলে হবে না। সাধারণ মানুষ সাড়া দিতে পারেন, এমন বিষয় চিহ্নিত করে নিজেরা সক্রিয় হয়ে পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টাও করতে হবে। সেই সূত্রই মধ্যমগ্রামের ঘটনায় আলিমুদ্দিন মেনে চলেছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। মেয়েটির মৃত্যুর পরেই প্রতিবাদ কর্মসূচির রাশ তুুলে দেওয়া হয়েছিল সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর হাতে। ছাত্র আন্দোলনের পর্বে একদা যিনি রবার্ট ম্যাকনামারাকে কলকাতায় ঢুকতে না দেওয়ার কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, প্রৌঢ় বয়সে সেই শ্যামলবাবুকেই গত দু’দিনে আর জি কর থেকে এয়ারপোর্ট কলোনি হয়ে নিমতলা পর্যন্ত ছুটে প্রতিবাদ সংগঠিত করতে দেখা গিয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে পুলিশের হঠাৎ মাঝপথ থেকে দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া যে তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, অস্বীকার করছেন না সিপিএম নেতারা। শ্যামলবাবুর কথায়, “পুলিশ পশুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল! আমরা চেয়েছিলাম রাজপথে মানুষের ঘৃণা উপচে পড়ুক!” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো ছোট দলগুলিও প্রতিবাদে নেমেছিল এ দিন।
বামেদের এই প্রতিবাদকে শাসক দল অবশ্য ‘দেহ নিয়ে রাজনীতি’র চেষ্টা হিসাবেই দেখছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তব্য, “ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে সিপিএম এবং কিছু ব্যক্তি তৃণমূলের সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে!” তাঁর আরও দাবি, “ঘটনায় অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে। চার্জশিটও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে পরিকল্পনমাফিক অশান্তি তৈরি করতে চাইছে সিপিএম। মানুষ এর জবাব আগামী দিন ভোটে দেবে!” একই সুরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “এমন একটি দুঃখজনক মৃত্যুকে নিয়ে সস্তার রাজনীতি করছে বামেরা!” রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রও বলেছেন, “সিপিএম ধর্ষণের কথা যত কম বলে, ততই ভাল! বর্ণালী দত্ত থেকে শুরু করে অনিতা দেওয়ানের মতো অনেক মহিলাই সিপিএমের দুষ্কৃতীদের হাতে ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন। তৃণমূল কিন্তু প্রমাণ করেছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়!”
যার জবাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেছেন, “পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে দেহ নিয়ে রাজনীতি সরকারই করেছে! রাস্তা থেকে পুলিশ দিয়ে দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার কী দরকার ছিল? সর্বোচ্চ স্তরে পুলিশমন্ত্রীর আশীর্বাদ ছাড়া এ সব হয় না!” সূর্যবাবুর ইঙ্গিত যেমন পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর দিকে, তেমনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সরাসরিই তাঁর ইস্তফা দাবি করেছেন। প্রদীপবাবুর কথায়, “সিঙ্গুরে যখন তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল, তখন আমরা সিবিআই তদন্ত এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। এ ক্ষেত্রেও কেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না?” শাসক দল যে ভাবে বিরোধীদের দল ভাঙাচ্ছে এবং হামলা চালাচ্ছে, তার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার গাঁধীমূর্তির নীচে কংগ্রেস বিধায়কদের ধর্না কর্মসূচি পূর্ব ঘোষিতই ছিল। তার সঙ্গে মধ্যমগ্রাম নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি যোগ করা হয়েছে।
ছুটির দিনে সিটুর রাজ্য দফতর থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে (দেহ চলে যায় নিমতলা) ভিড় হয়েছিল ভালই। রাজ্য জুড়ে আজও প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “পরিবারের লোকজনের অনুপস্থিতিতে পুলিশ জোর করে দেহ তুলে নিয়ে গিয়েছে এবং ডেথ সার্টিফিকেট না থাকায় দাহ করতে না পেরে শ্মশানে ফেলে রেখেছে, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা অতীতে কোনও দিন ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই!” আর সূর্যবাবু বলেছেন, “দিল্লি, আইন-আদালত, বিচারের দাবিতে যত দূর যেতে হয় যাব!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.